সৌরভ লোধ||
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীনতা আর দখলে-দূষণে স্থানীয়দের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পৌর শহরের খালগুলো।
জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার কিংবা খনন কাজ না হওয়ায় ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খাল গুলো। অন্যদিকে সরকারি এসব খালের বিভিন্ন অংশে কতিপয় ভূমিদস্যুরা নানা ভাবে দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। স্বল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে একদিকে বাসা-বাড়ি, রাস্তাঘাট জলাবদ্ধতায় সাধারণের যাতায়াতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষি নির্ভর এ পৌরসভার ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে বছরের পর বছর। এই পরিস্থিতিতে পৌরসভা ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসিনতায় গত প্রায় আড়াই দশক যাবত এসব খালসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর শহরের মৌলভী বাজার, পাঠানপাড়া, মণিপুরা, অর্জুনতলা, দেওড়া, বাগমারা শুশুন্ডা, কাসেজ্জা, পুরান কাদবা, তলাগ্রাম, অফিসপাড়া এবং পান্ডব খালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার কিংবা খনন কাজ না হওয়ায় এসব খালে হোটেল রেস্তোরাঁর বর্জ্য, বাসাবাড়ির আবর্জনা, বাজারের ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন বর্জ্য, ক্লিনিকেল বর্জ্যসহ নানা আবর্জনা খালজুড়ে জমে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে জন্মেছে কচুরিপানা, বিভিন্ন প্রজাতির
আগাছা।
যার ফলে এ সমস্ত আবর্জনায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ। আর পানির সঙ্গে ময়লা আবর্জনা মিশে পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ঘটছে পরিবেশের দূষণ। বংশবিস্তার করছে মশা-মাছিসহ নানা ধরনের কীটপতঙ্গ। এ থেকে সৃষ্ট নানা ধরনের রোগজীবাণু বিস্তার ঘটছে। অন্যদিকে এক শ্রেণির কতিপয় অসাধু ব্যক্তি
ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় এসব খালের বিভিন্ন স্থানের পাড় ও খাল দখল করে ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করছে। ফলে কমে গেছে খালের প্রসস্থতা এবং গভীরতা।
এ সময় পৌর শহরের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ভিপি আওলাদ হোসেন দুলাল বলেন, এক সময় এসব খালের পানির ব্যাপক প্রবাহ ছিল। ডাকাতিয়া-মেঘনার সঙ্গে সংযোগ থাকায় ছিল জোয়াড়-ভাটা। শৈশবকালে এসব খালের উপর লাফিয়ে পড়ে পানিতে ডুবিয়ে আনন্দে মেতেছি। হাজীগঞ্জ, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যে বরুড়ার অন্যতম জলপথ ছিল এসব খাল। পৌর শহরের পাট বাজারে ছিল নৌকার ঘাট। আর এ ঘাটসহ আশেপাশে খালসমূহে ধান, চাউল, পাট, গুড়, মাছসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী বোঝাই শত শত নৌকা এখানে ভিড়ত। এছাড়া প্রতি বছর কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাসে পানি হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে এসব খালে এলাকার শত শত মানুষ জালসহ নানা উপকরণ দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠতেন। এখন এসব শুধু ই স্মৃতি।
এই বিষয়ে পৌরসভার সচিব মো. মহসিন বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, পৌরসভার খালগুলো খনন করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। এত অর্থ পৌরসভার নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু-এমং মারমা মং বলেন, সম্প্রতি পৌর প্রশাসকের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্তির পর আমি পৌরসভার অর্থায়নে প্রায় ২শ মিটার খালের আবর্জনা পরিষ্কার করিয়েছি। অর্থ সংকটের কারণে পৌর শহরের খালগুলোর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা যাচ্ছে না।