কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ফসলি জমির উপরিভাগের (টপসয়েল) মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ফসলী জমির ফসল উৎপাদনের জন্য কার্যকর উর্বরাশক্তি নষ্ট হচ্ছে।
শীতের শেষের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অপকর্মযজ্ঞটি বেশী দেখা যায়। এতে জমির ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি মাটি টানার ট্রাকটারে চলাচলের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে চোখে পড়ার মত। এতে অহরহ চরম দুর্ভোগে পড়ছেন এলাকাবাসী।
দিন-রাত বিরামহীন ভাবেই উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে উর্বরতা নষ্ট করছে মাঠের পর মাঠ ফসলী জমির। । মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের তিন ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি নানা কৌশলে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে কিনে একটি প্রভাবশালি চক্র উপজেলার অন্তত ৪০টি ইটভাটায় বিক্রি করছে। এতে অন্যান্য জমির যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি ধুলায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। আর এলাকাবাসী শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। এভাবে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ার পেছনে সিন্ডিকেটের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু লোকজনের যোগসাজোশ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মাটিকাটা সিন্ডিকেট জমির মালিকদের বোকা বানিয়ে মাটি কেটে পুকুরের মতো খনন করছে জমি। ফলে আশপাশের জমিতে ফষল উৎপাদন ব্যহত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে অন্যরাও জমির মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, তাদের জমির ওপর দিয়ে জোর করে রাস্তা বানিয়ে ইটভাটায় মাটি নেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাঁদের ক্ষতি করে এই ব্যবসা করা হচ্ছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে। কেউ জোরালোভাবে বাধা দিলে তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় বলেও জানান তারা। প্রতিনিয়ত দিনে রাতে ট্রাক্টর, ড্রামট্রাকে ভরে মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। কিন্তু দেখার কেউ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল এলাকায় আলাউদ্দিন আলা, আজিজ, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের হারুন মুন্সি, লুঙ্গি জসিম, বাবুটিপাড়া ইউনিয়নে রকিব, মোশাররফ, বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা বিপ্লব হোসেন, নাছির উদ্দিন, দিঘির পাড়ের সারোয়ার হোসেন, নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের পৈয়াপাথর, গুনজুর গ্রামের কিবরিয়া, মামুন এবং দক্ষিণ ত্রিশ এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা সফিক তুহিনসহ মাটি সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভেকু মেশিন দিয়ে ট্রাক্টর এবং ড্রাম ট্রাকযোগে গোমতী চরের ও তিন ফসলি জমির উপরিভাগের (টপসয়েল) মাটি কেটে নিচ্ছে।
মাটিকাটা সিন্ডিকেটের সদস্য শাকিল, আলা, আমির হোসেন জানান, তারা কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দিয়েই জমির মাটি ক্রয় করছেন। কাউকে জোর জবরদস্তি করা হয় না। তাছাড়া সব সেক্টর ম্যানেজ করেই তারা মাটি কিনে ইটভাটায় বিক্রি করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে তা ইটভাটায় নেওয়ার সুযোগ নেই। মাটিকাটা সিন্ডিকেট কিংবা ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। প্রশাসনের সঙ্গে তাদের যোগসাজোশ রয়েছে কথাটি সঠিক নয়। এসব মাটিকাটা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছি।