বিবর্তন রিপোর্ট:
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে যুবলীগ সভাপতি জামাল উদ্দিন ওরফে বাক্কাকে গুলি ও ধারালো অস্ত্র ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত।
রবিবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলাসার গ্রামের আশ্রাফ আলীর ছেলে চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চু (৫৫), আলকরা গ্রামের মোহাম্মদ উল্ল্যাহর ছেলে আব্দুর রহমান, শিলরী গ্রামের মৃত তজু মিয়ার ছেলে মফিজুর রহমান খন্দকার (৪২), কেন্দুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল গোরফানের ছেলে জিয়াউদ্দিন শিমুল (৪২), শিলরী গ্রামের আবু তাহের এর ছেলে জাহিদ বিন শুভ (২৮), আলকরা’র নাজির আহমদ এর ছেলে রেজাউল করিম বাবলু (৩৮) ও উত্তর শর্শদী’র শহীদ উল্লাহ এর ছেলে মোঃ আমির হোসেন (২৭)।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আলকরা’র তাজুল ইসলাম এর ছেলে নুরুল আলম (৩৩), নুরুল ইসলাম এর ছেলে কফিল উদ্দিন (২৭), শিলরী গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিন এর ছেলে নুরুন্নবী সুজন (২৭), কুলাসার গ্রামের শামসুল হক এর ছেলে ইকবাল আহাম্মদ (২৭) ও নুরুল ইসলাম এর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শিলরী মৃত তজু মিয়ার ছেলে মাহফুজুর রহমান খন্দকার (২৮), কুলাসার গ্রামের মৃত ইসমাইল ভেন্ডার এর ছেলে
মোঃ মোশাররফ হোসেন (৪৫), নোয়াবাদ গ্রামের মৃত মোস্তফা ড্রাইভার এর ছেলে মোঃ আলাউদ্দিন (৪০) ও আশফালিয়া গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মোঃ আলী হোসেন (৩৩)।
খালাস প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ভাজনকরা’র নজির আহমেদ এর ছেলে নজরুল ইসলাম শিমুল (২৭), ভাজনকরার মনির ড্রাইভার এর ছেলে মোঃ আজিম উদ্দিন (২৮), ভাজকরার মীর হোসেন এর ছেলে আনোয়ার হোসেন সোহেল (৩৩), শিলরী আবদুল মালেক এর ছেলে আতিকুর রহমান প্রঃ নান্টু (২৬) ও কুলাসার গ্রামের মৃত লোকমান এর ছেলে ইউসুফ হারুন মামুন (৪২)।
মামলার বিবরণে জানাযায়- মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিবাদ করায় ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি দিবাগত-রাত ৮টায় প্রধান আসামি আলকরা ইউনিয়ন এর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুসহ অপরাপর আসামিরা পরষ্পর যোগসাজশেকুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি ও বাস মালিক জামাল উদ্দিন ওরফে বাক্কা ডেকে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম পদুয়া রাস্তার মাথায় প্রথমে গুলি করে পরে ধারালো অস্ত্র ছুরিকাঘাতে জবাই হত্যা করেন। এ ব্যাপারে ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি নিহত জামাল উদ্দিন ওরফে বাক্কার বড়বোন জোহরা আক্তার (৪৭) বাদী হয়ে ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুসহ ২৩জনের নাম উল্লেখ করে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ হোছাইন ঘটনার তদন্তপূর্বক আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল প্রধান আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৬৪/৩০২/৩৪ ধারার বিধানমতে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারে আসিলে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধান আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চুসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করে এবং রাষ্ট্র পক্ষে ১৭জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান আসামি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন বাচ্চু, সালা উদ্দিন, আব্দুর রহমান, সফিকুর রহমান খন্দকার, জিয়াউদ্দিন শিমুল, জাহিদ বিন শুভ, মোঃ রেজাউল করিম বাবলু ও মোঃ আমির হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সেই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। এছাড়াও আসামি নুরুল আলম, কপিল উদ্দিন, নুরুন্নবী সুজন, ইকবাল আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান খন্দকার, মোঃ মোশাররফ হোসেন, মোঃ আলাউদ্দিন ও মোঃ আলী হোসেনকে যাবজ্জীবন এবং সেই সাথে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন এবং আসামি নজরুল ইসলাম শিমুল, আজিম উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন সোহেল, আতিকুর রহমান প্রঃ নান্টু ও ইউসুফ হারুন মামুনকে খালাস প্রদান করে আদালত।
রায় ঘোষণাকালে আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মোঃ আলী হোসেন। বাকী সকল আসামি-ই পলাতক ছিলেন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী এপিপি মোঃ জাকির হোসেন বলেন, আমি আশাবাদী উচ্চ আদালত রায় বহাল রেখে শীঘ্রই কার্যকর করবেন।
এদিকে, আসামিপক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ আইনজীবী মোঃ মাসুদ সালাউদ্দিন ও মোঃ আ.হ.ম তাইফুর আলম বলেন, এ রায়ে আসামি সংক্ষুব্ধ। রায়ে কপি হাতে পেলে শীঘ্রই উচ্চ আদালতে আপীল করবো।