বিবর্তন রিপোর্ট।।
আকামা নিয়ে বিরোধের জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আনোয়ারা বেগমকে মারপিটসহ বালিশ দ্বারা চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার দায়ে আল-আমিন নামের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
মামলার বিবরণে জানাযায়- স্বামী হাবিবুর রহমানের মুত্যুর পর আনোয়ারা বেগম কুমিল্লা দেবিদ্বার ভিংলাবাড়ী গ্রামে তার স্বামীর বসতভিটায় একা বসবাস করতেন। পিতার মৃত্যুর পূর্ব থেকে নিহত আনোয়ারা বেগমের পুত্র ফেরদৌস সৌদিআরবে থাকেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ৫ বছর ধরে প্রতিবেশী স্বামী হাবিবুর রহমানের ভাই মজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগমের সাথে নিহত আনোয়ারার পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছিল।
এদিকে একই গ্রামের বাসিন্দা সামাদ ডাক্তারের ছেলে মারুফ হোসেনকে আনোয়ারা বেগমের প্রবাসী ছেলে ফেরদৌস সৌদি আরব নিয়ে যায়। সেখানে ফেরদৌস মারুফ হোসেনকে আকামা দিতে ব্যর্থ হয়। ভাই মারুফের আকামা না হওয়াতে সামাদ ডাক্তারের অন্য দুই ছেলে মামুন এবং মোস্তাফিজ রাগান্বিত হয়ে বাড়ীতে গিয়ে ফেরদৌসের মা আনোয়ারা বেগমকে নিত্য গালমন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ভয়ভীতিসহ প্রাননাশের হুমকি দেয়।
মামলার বাদী আনোয়ারা বেগমের মেয়ে উম্মে সালমা খাতুন(২২) স্বামীর সাথে ঢাকায় বসবাস করতেন। ঘটনার দিন ভোরে নিজ বাবার বাড়ী ভিংলা বাড়ী গ্রামে এসে মা আনোয়ারা বেগমকে মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন।
তিনি মায়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঁটাছেড়াও দেখতে পান। নিহতের মেয়ে উম্মে সালমা এলাকাবাসী এবং আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে খবরাখবর নেন। মায়ের এ মৃত্যুর ঘটনায় তিনি তাঁর চাচা মজিবুর রহমান এবং চাচী মমতাজ বেগমকে সামাদ ডাক্তারের ছেলে মামুন এবং মোস্তাফিজের সাথে যোগসাজস রয়েছে বলে সন্দেহ করেন।
এদিকে সৌদিআরবে ভাই আকামা না পাওয়ার ক্ষোভে আসামি দু’ভাই এবং মজিবুর চাচা ও চাচী পরষ্পর যোগসাজশে বহিরাগতদের সহযোগিতায় ২০১০ সালের ৩ মার্চ দিবাগত মধ্য রাতে আনোয়ারা বেগম কে মারপিটসহ বালিশ দ্বারা চাপাদিয়া শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে বলে নিহতের মেযে সালমা তাদের সকলের উপর অভিযোগ তোলেন। পরে এ ব্যাপারে নিহতে এ মেয়ে মোছাঃ উম্মে সালমা খাতুন (২২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পরদিন দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ আনোয়ার উল্লাহ আসামি আল-আমিনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে একই উপজেলার ভিংলা বাড়ী’র সুলতান আহমেদ এর ছেলে আসামী মোঃ নজরুল ইসলাম (৩৪), ডাঃ আঃ সামাদ এর ছেলে আসামি মোস্তাফিজুর রহমান (২৬), মৃত সুজাত আলীর ছেলে আসামি সুলতান আহমেদ (৬০) ও সাজু মিয়ার ছেলে আসামি আল-আমিন (২০) এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর মামলাটি বিচারে আসলে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে রাষ্ট্রপক্ষে জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি আল-আমিন এর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে পলাতক আসামি আল-আমিন এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড; সেইসাথে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং আসামি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত।
উল্লেখ যে, মামলা চলাকালীন সময়ে আসামি মোঃ নজরুল ইসলাম ও সুলতান আহমেদ মৃত্যু বরণ করায় তাদেরকে মামলার দায় হইতে অব্যাহতি প্রদান করেন আদালত।
এ রায়ে ঘটনার সাথে জড়িত প্রধান আসামি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে বিজ্ঞ আদালত বেকসুর খালাস প্রদান করায় অসন্তোষ প্রকাশ করে অভিযোগকারীনি মোছাঃ উম্মে সালমা খাতুন হাউমাউ করে চিৎকার করে বলেন, রায়ের কপি হাতে পেলে শীঘ্রই উচ্চ আদালতে আপীল করবো।