
Oplus_131072
সৌরভ লোধ ||
ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করে ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছেন হালকা ওয়াশ ফেসবুক পেইজের এডমিন জোবায়ের হোসেন হৃদয় (২৪)।
পড়াশোনায় অমনোযোগী হৃদয় শেষ করতে পারেনি প্রাথমিকের গণ্ডি।তবে এখন ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন নিজ এলাকা সহ পুরো বাংলাদেশে।
হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের ছোট লক্ষীপুর গ্রামে। তার বাবা মো.কবির হোসেন একজন প্রবাসী। মা গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে হৃদয় সবার বড়।
জোবায়ের হোসেন হৃদয় বলেন, ২০১৩ সাল থেকে আমি ভিডিও ফটোগ্রাফির কাজ করতাম বিজরা শাপলা স্টুডিওতে। এর আগে ওয়ার্কশপ সহ নানা জায়গায় কাজ করতে হয়েছে পরিবারের হাল ধরতে। স্টুডিওতে যখন থাকতাম বিভিন্ন বিয়ের প্রোগ্রাম করতে হতো।তখন থেকেই ভিডিও বানানোর ভুত মাথায় চেপে বসে। আমার ভিডিও বানানোর প্রথম মাধ্যম ছিলো লাইকি সফটওয়্যারে। তখন জীবন মাহমুদ ভাই কনটেন্ট ক্রিয়েট এ পরিচিত মুখ ছিল। একদিন শুনলাম ওনি আমাদের পাশের গ্রামে আসছে। তাড়াহুড়ো করে চলে যাই পরিচিত হতে। তারপর ওনার সাথে ফানি ভিডিও বানানোর জন্য দাদুর থেকে ১৫০০ টাকা নিয়ে ঢাকা চলে যাই। সেখানেও বেশিদিন থাকা হয়নি। কিছুদিন পরই বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ি এসে শুনি আমাদের পাশের গ্রামের কবির হোসেন নামে একজন ভিডিও বানায়।এবং রাতারাতি সে অনেক জনপ্রিয় হয়ে যায় বিভিন্ন কারনে। তার ফেসবুক পেইজের নাম ছিলো বদ মেজাজ।তারপর কবিরের সাথে দেখা করি।সে একদিন আমাকে বললো একটা ফেসবুকে পেইজ খুলতে। তার কথা অনুয়ায়ী পেইজ খুললাম।আমার পেইজের নাম (হালকা ওয়াশ) এটাও আমার বন্ধু কবিরের দেওয়া।
পরের দিন একটা ফানি রোস্ট ভিডিও আপলোড করি।পেইজে তখন ফলোয়ার সংখ্যা ৫ জন, কিন্তু সে ভিডিও ভিউ হয় ৫ হাজার। তখন থেকেই মনে হয়েছে আমি ফানি ভিডিও করলে কিছু একটা করতে পারবো।এর মধ্যেই ফেসবুকে রিপা আক্তার(টুনি) এর সাথে পরিচয়।রিপার বাড়ি ছিলো সাভারের হেমায়েতপুর গ্রামে।কথা বলার কয়েক মাস পরে আমরা দুইজন বিয়ে করে ফেলি।তখন ফেসবুকে বিভিন্ন ভিডিও বানালেও মনিটাইজেশন না থাকায় আয় আসতো না। তারপর আয়ের খোঁজে টুনিকে নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড এ ডুকে যাই।সেখানে একটা কোম্পানিতে চাকরি করি আমরা দুইজনেই।সারাদিন ঘুরাঘুরি করা ছেলেটা যখন আবদ্ধ জায়গায় বন্ধি হয়ে গেলাম,তখন মনে হতো কবে যে এই জেল থেকে মুক্তি পাবো। ১ মাস চাকরি করার পর টুনিকে নিয়ে বাড়ি চলে আসি। বাড়ি এসে কন্টেন্ট বানানোর কাজে মন দেই। ২০২২ সালে পেইজ মনিটাইজেশন পায়। তখন থেকে ৩ মাস পর পর ১৫/২০ হাজার করে পেতাম।তখন টুনিকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাই।সেখানে পরিচিত ভাইদের সাথে ভিডিও বানাতে শুরু করি। কিন্তু গ্রামের ছেলে কোন কিছুতেই শহরে মন বসাতে পারতাম না। প্রায় ৮ মাস ঢাকায় থাকার পর আবার বাড়ি চলে আসি। বাড়ি এসে প্রতিদিন কমপক্ষে ১টা হলেও ভিডিও দিতাম পেইজে। তখনি আল্লাহ আমার দিকে মুখ ফিরে তাকিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই আমার অনেক ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় আর পিছনে তাকাতে হয়নি। আমার মূল ফোকাস ছিলো আঞ্চলিক ভাষা দিয়ে ভিডিও বানানো। এবং এটাতে আমি সফল হয়েছি। আমার এক মাসে সর্বোচ্চ ১লাখ ৪৩ হাজার টাকা ইনকাম হয়েছিলো। এমনেতে গড় হিসাব করলে এখন ৫০/৬০ হাজার করে পাই। এখন আবার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের জন্য কল পাই।এখান থেকে কিছু হাত খরচ আসে।

হৃদয় আমাদের আরো জানান, ফেসবুকের আয় দিয়ে গত বছর আমার স্বপ্নের বাইক কিনলাম ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে। আর আরেক টা স্বপ্ন ছিলো একটা প্রাইভেটকার কিনবো। সেটাও বাস্তবায়ন করলাম এই বছর।কিছুদিন আগে একটা প্রাইভেটকার কিনেছি ১০ লাখ টাকা দিয়ে। এখন আমার নতুন আরেকটি স্বপ্ন জন্ম নিয়েছে। বাংলাদেশের সব জেলায় হালকা ওয়াশ নামের একটা প্রতিষ্ঠান থাকবে।আর প্রতি জেলার গ্রামীণ দৃশ্য নিয়ে ভিডিও বানানো।
আসলে ফেসবুক, ইউটিউব খুবই সাধারণ জায়গা। কারণ এখানে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যেখানে টাকা, সম্মান আর মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। তবে আপনাকে লেগে থাকতে হবে। শুরু করতে হবে। ধৈর্য্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সাফল্যের দেখা পাবেন।
হৃদয়ের সহধর্মিনী রিপা আক্তার টুনি আমাদের বলেন,হৃদয়ের সাথে যখন আমার বিয়ে হয়, তখন অনেক কষ্টে আমাদের জীবন চালাতে হয়েছে। আমরা তখন ঢাকাতে ছিলাম।ঘর ভাড়াটাও দিতে পারতাম না। আমার নানুর বাড়ি থেকে টাকা এনে ঘর ভাড়ার টাকা দিতাম। যখন আল্লাহ আমাদের দিকে তাকিয়েছে তখন মানুষের কটু কথা শুরু হয়। আমাকে নিয়ে কেনো ভিডিও বানায়,আমি কেনো ভিডিওতে থাকি এগুলা নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমাদের। আমরা সবার কটু কথাকে আশীর্বাদ মেনে কাজ চালিয়ে যেতাম।এখন আমরা খুব ভালো আছি।কোন জায়গায় গেলেও মানুষ খুব সম্মান দেয়।