কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় প্রকাশ্যে এক শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে সে পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
বুধবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের নলকুঁড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত গোলাম রসূল লিটন (৪৮) ওই গ্রামের তফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তিনি স্থানীয় নূরানী কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি বাড়ির একটি ঘরে কোচিং সেন্টার চালাতেন। সেখানে ঐ কিন্ডারগার্টেন এর ছাত্র ছাত্রী সহ অন্য শিক্ষার্থীরা পড়তো।
আটক সাফায়াত আলী (৩৫) একই এক বাড়ীর শাহ আলমের ছেলে। নিহত শিক্ষক লিটন সম্পর্কে সাফায়তের ভাতিজা হয়।
এলাকার বাসিন্দারা জানান,লিটন স্যার তার কোচিং এ প্রতিদিনের মত ছেলে-মেয়েদেরকে নিজের ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে পড়াচ্ছিলেন। এমন সময় ওই বাড়ীর মৃত শাহ আলম মজুমদারের ছেলে বিদেশ ফেরত মাদকসেবি শাফায়াত আলী (৩৫) কোচিং সেন্টারের ভেতরে ঢুকে বাড়ীর পাশের ঘর থেকে পেয়াজ মরিচ দিয়ে মূড়ি বানানোর নাম করে বটি দা চেয়ে নিয়ে ওই কোচিং ঘরে প্রবেশ করে। শিক্ষার্থীদের পড়াকালীন অবস্থায় শিক্ষক লিটনের পেছন থেকে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। পরে কোচিং ঘরের বাইরে গিয়ে দা উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের চিৎকারে বাড়ীর মানুষ এগিয়ে যেতে চাইলো ঘাতক সাফায়াত দা উচিয়ে ধরে। পরে বাড়ীর লিটনের জেঠাতো ভাই সুমন সাহস করে এগিয়ে গিয়ে তাকে ধরার চেষ্টা করকে সে পালিয়ে যায়।
পরে সুমন গুরুতর আহত এবং গলার একটি অংশ ঝুলে থাকা অবস্থায় লিটনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ওই হত্যাকারী শাফায়াতের সাথে এ শিক্ষকের কোন দ্বন্ধও ছিল না। কি কারণে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি । তবে একই বাড়ীর সম্পর্কে লিটনের ভাই বলছেন, সাফায়াত এর জানালা দরজা বিহীন একটি একচালা ঘরের পাশে লিটন কোচিং এ ছাত্রছাত্রীদের পড়াতো। আর এতে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার কারণে সে শিক্ষককে হত্যার কারন হতে পারে আমি মনে করি।
তাছাড়া গত ২ মাস আগে ,আমি, লিটন এবং সাফায়াতের বড় ভাই সহ মাদকাসক্ত সাফায়াতের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে তাকে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে গ্রামছাড়া করা চেষ্টা করেছিলাম। সেই কারণে রাগ করে এ হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে । এর আগেও লিটনের প্রতি পাঠদানের কারণে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে বলে একাধিকবার অভিযোগ তুলেছিল ঘাতক শাফায়াত আলী।
লিটনের জেঠাতোভাই মো. মোশাররফ হোসেন মজুমদার সুমন আরো জানান, হত্যার মূলত কোনো কারণ আসলে খুঁজে পাচ্ছি না। তবে ঘাতক সাফায়াত আলী দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবন করে আসছে। তাকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রেও রেখে এনেছেন তার ভাই সহ পরিবারের লোকজন। তবু সে নেশার ছোবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। সে মাদক সেবন করে জনশান্তি বিনষ্ট করে আসছিল। এ কারণে নিহত গোলাম রসুল লিটনসহ স্থানীয় লোকজন তাকে এলাকা ছাড়া করার জন্য উদ্যোগ নেয়। ধারণা করা হচ্ছে এ কারণেই সাফায়াত আলী শিক্ষক গোলাম রসুল লিটনকে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, সাফায়াত আলী সামাজিক মানুষ ছিল না। সে বিয়ে করেছিল, কিন্তু নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে তার বউও তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরিবারের সদস্যরাও তার সাথে পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে। তবে তার মা তাকে বিভিন্ন ঘর থেকে খাবার সংগ্রহ করে খাওয়াতো। এছাড়াও সে যেখানে ঘুমাতো তার খুব কাছেই ছিল শিক্ষক লিটনের কোচিং সেন্টার। সে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার শব্দে ঘুমে বিঘ্ন ঘটতো। এ নিয়েও অভিযোগ তোলার পর সে একাধিকবার শিক্ষক গোলাম রসুল লিটনকে প্রকাশ্যে শাসিয়ে ছিল।
এদিকে নিহতের মা আকলিমা ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তাঁর মাথায়ও কোপ মারে ঘাতক শাফায়াত আলী। ছেলের হত্যার খবর পেয়ে লিটনের বাবা তোফাজ্জল হোসেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। মা আকলিমা বলেন, আমি আর কিছু চাই না, আমার কলিজার ধন ছেলের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই ।
গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল প্রধান বলেন, নিহত শিক্ষক লিটন মানুষ হিসেবে যথেষ্ট ভালো ছেলে ছিল। সকালবেলাও তার সাথে আমার কথা হয়েছিল। যে হত্যা করেছে সে একজন মাদকাসক্ত লোক। এ ঘটনায় তাকে এলাকাবাসী ধরতে গেলে সবার দিকে দা দিয়ে কুপ দিতে চাইলে তাকে আর ধরা যায়নি। আমি এ হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। সে মাদকাসক্ত ছিল। তার শোবার ঘরের পাশেই নিহত শিক্ষক গোলাম রসুল লিটন কোচিং সেন্টারে শিশুদের পাঠদান দিতেন। এতে ঘাতক সাফায়াত আলীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতো বলে একাধিকবার অভিযোগ তোলে সে। এ কারণেও এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে প্রকৃতপক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক কোনো কারণ বোঝা যাচ্ছে না।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় ও গলায় কোপানোর চিহ্ন রয়েছে তাঁর এবং গলার কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন ছিল। এ ঘটনায় সাফায়াত আলী নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত শিক্ষকের স্ত্রী মাহমুদা হেলেনা থানায় দুই জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।এরা দুইজন হলেন শাফায়াত আলী এবং কায়সার। ঘটনার পর রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শাফায়াত আলীকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যার কারণ জানতে তদন্ত সহ আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।