কুমিল্লা সিটি উপ-নির্বাচন
নিরাপত্তার চাদরে কুমিল্লা মহানগর।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য ছাড়াও থাকছে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্য।
দিলীপ মজুমদার, কুমিল্লা ব্যুরো:
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে শনিবার (৯ মার্চ)। ইভিএমের মাধ্যমে এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। শুধু কেন্দ্র নয়, সারা কুমিল্লাকে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে আনার দাবি করেছেন প্রার্থীরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে সংঘটিত অপরাধ আমলে নেওয়া এবং সংক্ষিপ্ত বিচারকার্জ সাধনের জন্য নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ৯ জন বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাত থেকে তাঁরা এ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
নিয়োগপ্রাপ্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠুভাবে বিচারিক কাজ পরিচালনার জন্য প্রত্যেকের সঙ্গে একজন সশস্ত্র এসআই (পুলিশের উপ পরিদর্শক)-এর নেতৃত্বে চারজন কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে।
নির্বাচন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে আজ থেকে কুমিল্লার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিক এবং ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা সুলতানা।
৭,৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামাল হোসেন। ১০,১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম তানজিলা আক্তার। ১৩,১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্বাস উদ্দীন।
১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান। ১৯,২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম সৈয়দা মোসাদ্দেকা। ২২,২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস.এম. আলাউদ্দিন মাহমুদ এবং ২৫,২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিদারুল আলম।
আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়র পদে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে মোট চারজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে কুসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ইভিএম মেশিনে।
এদিকে,প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের ভোটের প্রচার। দু ‘একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণই ছিল প্রার্থীদের প্রচারণার বিগত সময়গুলো।
তফসিল অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার। শনিবার নতুন মেয়র নির্বাচনে ভোট দেবেন প্রায় আড়াই লাখ নগরবাসী।
ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এই মুহূর্ত থেকে শুধুমাত্র ১০৫টি কেন্দ্রে নয়, পুরো কুমিল্লা নগরীকে নিরাপত্তার আওতায় আনার জোর দাবি জানায়।
এ উপ- নির্বাচনে চার জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা নিজাম উদ্দিন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। বাকি তিন প্রার্থী হলেন তাহসীন বাহার সূচনা (বাস), মনিরুল হক সাক্কু (টেবিলঘড়ি) ও নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম (হাতি)। তাহসীন বাহার স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মাহমুদ তানিম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। মনিরুল হক দুবারের সাবেক মেয়র। নিজামউদ্দিন গত নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৯৯ ভোট পান।
বৃহস্পতিবার দিনভর মিছিল, মাইকিং আর স্লোগানে-স্লোগানে নগরবাসীদের কাছে যান প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা; নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্ব স্ব মার্কায় ভোটারদের সমর্থন চান তারা।
এদিকে সাবেক মেয়র সাক্কু তার কর্মীসমর্থকদের সকল বাঁধা উপেক্ষা করে ভোটাদের স্ব স্ব কেন্দ্রে ভোট প্রদানে সক্রিয় সহযোগিতা করার আহবান জানান।
হাতি প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা তানিমও স্থানীয় সংসদ সদস্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কেবল একজন মানুষ ভোটকে বিতর্কিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁর মেয়ে মেয়র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাহসিন বাহারের বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার জন্য।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিচ্ছিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বাস প্রতীকের প্রার্থী সূচনা বলেন, ইভিএমে যদি ভোট লুট করার ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও ওই দুই প্রার্থী কোন ভরসায় ভোটে এসেছেন? অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এ সব অভিযোগ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে বিতর্কিত করা ছাড়া কিছুই নয় বলে আমি মনে করি।
এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চার প্রার্থী। ঘড়ি প্রতীকে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, ঘোড়া প্রতীকে সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল কুমিল্লা মহানগর আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন কায়সার, বাস প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার এবং হাতি প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে নগরীকে একরকম নিরাপত্তার চাদরের ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা পুলিশ সুপার।
ইভিএম মেশিন কেন্দ্রে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই সিটি করপোরেশনে পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৮ হাজার ২৮২ জন, নারী ভোটার এক লাখ ২৪ হাজার ২৭৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুই জন রয়েছেন। ৬৪০টি ভোটকক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৪০ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, এক হাজার ২৮০ জন পোলিং এজেন্ট। নয় জন ম্যাজিস্ট্রেট, ও আচরণবিধি প্রতিপালনে ২৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ১০৫ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১২ প্লাটুনে ৪৫০ জন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। র্যাব ২৭ টিমে ৯৩৯ জন, পুলিশের ২৭ মোবাইল টিমে ১৩৩৯ জন এবং নয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। এ ছাড়াও দুটি থানার দুটি টিম রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আমরা যা যা প্রদক্ষেপ নেওয়া দরকার নিয়েছি। প্রচারণা শেষ হওয়ার পর থেকে শুধু কেন্দ্র নয়, পুরো কুমিল্লাকে নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ফল ঘোষণার পর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।’
পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘কুমিল্লাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দৃশ্যমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি থাকবেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরাও। কোনও বিশৃঙ্খলা হলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার কুমিল্লা উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বলেন, এ উপ- নির্বাচন সুষ্ঠুও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। যেমনটা হয়েছে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শেরপরীক্ষিত কর্মী আমি৷ নগরবাসী ভোট কেন্দ্রে আসবে অপেক্ষা কৃতশিক্ষায় এগিয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এমন সৈনিককে নগরবাসী ভোট প্রদান করে কুমিল্লা নগরকে সুপরিকল্পিত ভাবে সাজাবার সুযোগ করে দিবে। এটাই আমার চাওয়া।’