দিলীপ মজুমদার, কুমিল্লা ব্যুরো:কুমিল্লা সিটি করপোরেশেনর তৃতীয়বারের নির্বাচন শেষ হওয়ার দেড় বছরের মাথায় আগামীকাল শনিবার (৯ মার্চ) মেয়র পদে উপনির্বাচন ঘিরে ভোট উৎসবে মেতে উঠবে নগরবাসী। ২০০৫ সালের ১৫ জুন সিটির তৃতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত মৃত্যুবরণ করায় প্রতিটি শূন্য ঘোষণা করে এ পদে নির্বাচনী তফশিল নির্বাচন প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। সেই তফশিলের আলোকেই আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে শুক্রবার (৮ মার্চ) বেলা ১১ টায় কুমিল্লা জিল্লা স্কুল থেকে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয় কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ থেকে সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয় কেন্দ্রে।
কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন প্রতিসময় কে জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমান ইভিএম মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি পরিপূর্ণ নিরাপত্তায় পাঠানো হচ্ছে। আশাকরি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করতে পারবো। ভোট গ্রহণে কোন কেন্দ্রে বিপত্তি হলেই ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কুসিক নির্বাচনের এখন পর্যন্ত কোন ধরনের খারাপ পরিস্থিতির ঘটনা ঘটেনি। বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠের পরিস্থিতি ভালোই আছে। নির্বাচনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য ইতিমধ্যে সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিটির উপনির্বাচনে চারজন মেয়র প্রতি প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এরমধ্যে নগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাস প্রতীকের ডা. তাহসীন বাহার সূচী বাস প্রতীক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীক, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীক ও সাবেক ছাত্রনেতা নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম হাতি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
নগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের ভোটারের সঙ্গে কথা বলে বুঝা গেছে মূলতঃ সিটির এ উপনির্বাচনে বাস, ঘোড়া ও ঘড়ির মধ্যেই প্রতিদ্বন্ধীতামূলক লড়াই হবে। আর এ লড়াইয়ে যিনি এগিয়ে যাবেন তিনিই হবেন আগামি সাড়ে তিন বছরের জন্য কুসিকের মেয়র।
এদিকে জয়ের ব্যাপরে নগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহসীন বাহার সূচী যেমন আশাবাদী তেমনি বিএনপির প্রার্থী দাবিদার নিজাম উদ্দিন কায়সার ও মনিরুল হক সাক্কু নিজেদের শতভাগ জয়ের আশার মাঝে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নগরীর ৫৩ দশমিক ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার ভিডিপিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তায় অস্ত্রধারী পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে ১০ লাখ বাসিন্দার এ নগরীতে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ২ জন। ২৭টি ওয়ার্ড ১০৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪০টি ভোটকক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৬৪০ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, এক হাজার ২৮০ জন পোলিং এজেন্ট।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০৫ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১২ প্লাটুনে ৪৫০ জন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। র্যাব ২৭ টিমে ৯৩৯ জন, পুলিশের ২৭ মোবাইল টিমে ১৩৩৯ জন এবং নয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। এ ছাড়াও দুটি থানার দুটি টিম রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবে।
এছাড়াও উপনির্বাচনে সংঘটিত অপরাধ আমলে নেওয়া ও সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পাদনে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ৯জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন প্রতিসময় কে জানান, কুমিল্লাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দৃশ্যমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি থাকবেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরাও। কোনও বিশৃঙ্খলা হলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রঙ্গত, ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৭ জুলাই রিফাত মেয়রের দায়িত্ব নেন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যু হয়। এরপর ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত ২২ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।