বিবর্তন রিপোর্ট :
আজ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
সারাদেশে আজ পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা। ৩০ দিনের সংযম আর সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো পবিত্র রমজান মাস। ভালবাসা, সাম্য-সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এলো খুশির ঈদ।
ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশ ও বিশ্বমানবকূলের সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় নামাজ আদায়, দোয়া ও মোনাজাত শেষে পারস্পরিক মুক্ত আলিঙ্গনে সমর্পিত হন সবাই। ভুলে যান সব হিংসা -ভেদাভেদ। ঘরে ঘরে পরিবার পরিজন বন্ধু বান্ধবদের মাঝে বইছে আনন্দবাতাস।
অন্যদিকে আর এক দিন পরই আবহমান বাংলা ও বাঙালীর ঐতিহ্যের উৎসব পহেলা বৈশাখ। দুই মিলে এক নির্মল আনন্দ একাকার হয়ে আছে গোটা জাতি -দেশ সমাজ -পরিবারের সকলের মাঝে। তাই ভালবাসা, সাম্য-সম্প্রীতির ঈদ ও পহেলা বৈশাখে আপনজনদের ঘুরে আসা যাক কুমিল্লা দর্শনীয় জনপদে।
কুমিল্লা জেলার দর্শণীয় স্থান সমূহ নিয়ে সমৃদ্ধ শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ঐতিহাসিক এই জেলাটি সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দীর বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের আশ্রয়স্থল। অনেক অনেক আগে এই জেলা সমতট জনপদের অংশ ছিল। কালক্রমে এটি ত্রিপুরা রাজ্যভুক্ত হয়। জানা গেছে, কুমিল্লা নামটি এসেছে কমলাঙ্ক শব্দ থেকে, যার অর্থ পদ্মের পুকুর।
খাদি কাপড় ও রসমালাইয়ের জন্যে বিখ্যাত কুমিল্লা জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা।
শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এই জেলা প্রাচীনকালে সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল। কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় ভ্রমণ স্থান, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ঘুরে বেড়ানোর সকল পর্যটন স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, ধর্মসাগর দীঘি, রূপবান মুড়া, চন্ডীমুড়া মন্দির, ম্যাজিক পার্ক ইত্যাদি।
জাহাপুর জমিদার বাড়ি
কালের বিবর্তনে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটলেও কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে অবস্থিত জাহাপুর জমিদার বাড়ি (Jahapur Zamidar Bari) ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজো টিকে আছে। জাহাপুর গ্রামের প্রায় ৪০০ বছর আগে গৌরি মোহনের হাত ধরে এই জমিদার বাড়িটি নির্মিত হলেও ১৮৬২ খিস্টাব্দে এই বাড়িতে জমিদারীর গোড়াপত্তন হয়। ঢাকা জেলার সরোজী মহালের জমিদার রাধিকা মোহন দাস হতে শ্রী গৌরি মোহন রায়ের মাধ্যমে এই পরিবার জমিদারী লাভ করেন।
প্রায় ৩ একর আয়তন বিশিষ্ট জাহাপুর জমিদার বাড়ির প্রবেশ ফটকের দুপাশে দুইটি সিংহ মূর্তি রয়েছে। জমিদার বাড়িতে ৯টি দ্বিতল ও ৩তলা বিশিষ্ট মূল ভবন মিলিয়ে সর্বমোট ১০টি প্রাসাদ আছে। জাহাপুর জমিদার বাড়ির বর্তমান বংশধর প্রফেসর অঞ্জন কুমার রায়ের দাদা জমিদার অশ্বীনি কুমার রায় সর্বশেষ একটি প্রাসাদ, জগন্নাথ দেবের রথ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই জমিদার বাড়ির সবগুলো ভবনে মুঘল রীতিতে অঙ্কিত নকশা দেখতে পাওয়া যায়। প্রধান তোরণ দিয়ে জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতেই একটি নাট মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। নাট মন্দিরের পাশেই রয়েছে স্থায়ীভাবে নির্মিত দুর্গাদেবীর প্রতিমা।
এছাড়া জাহাপুর জমিদার বাড়িতে জমিদারদের ব্যবহৃত বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন শৌখিন খাট, নকশা করা চেয়ার, ফুলদানি, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, রুপার হাতলের ছাতা সহ নানান ধরণের নান্দ্যনিক কারুকার্যমণ্ডিত জিনিস চোখে পড়ে।
রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোম্পানীগঞ্জগামী সৌদিয়া, তিশা ইত্যাদি বাসে দেবিদ্বারের পান্নারপুল পৌঁছে সেখান থেকে বাখরাবাদ রোডে ১০ কিলোমিটার গেলে জাহাপুর জমিদার বাড়ি পৌঁছে যাবেন।
আর সায়দাবাদ হতে কুমিল্লাগামী বাসে উঠলে ময়নামতি নেমে সেখান থেকে কোম্পানীগঞ্জের বাসে চড়ে দেবিদ্বারের পান্নারপুল নামুন। পান্নারপুল থেকে বাখরাবাদ রোডে ১০ কিলোমিটার দূরে জাহাপুর জমিদার বাড়ি অবস্থিত।
ইটাখোলা মুড়া
কুমিল্লা সদর উপজেলার থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে কোটবাড়িতে অবস্থিত ইটাখোলা মুড়া (Itakhola Mura) সপ্তম বা অষ্টম শতকে নির্মিত একটি বৌদ্ধ বিহার। রূপবান মুড়ার বিপরীত পাশে সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৪০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই প্রত্নস্থানে তিনটি স্তর পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এখানে ইট পোড়ানো কারণে জায়গাটি ইটাখোলা মুড়া নামে পরিচিতি লাভ করে।
ইটাখোলা মুড়ায় বিভিন্ন সময় প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে একটি বৌদ্ধ মঠ ও বৌদ্ধস্তূপের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রায় ৫টি সাংস্কৃতিক যুগ অতিক্রম করার ফলে এই স্থানের সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনগুলো উদ্ধার করা বেশ জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবিষ্কৃত স্থানের মধ্যে বিস্তীর্ণ স্তূপ কমপ্লেক্স ইটাখোলা মুড়ার মূল আকর্ষণ। প্রায় ১৩.১ বর্গমিটার ভিতের উপর অবস্থিত এই স্তূপের সম্মুখভাগের কেন্দ্রে ২.৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২.১ মিটার প্রস্থ্যের একটি ক্ষুদ্র পীঠস্থান রয়েছে।
ইটাখোলা মুড়ার প্রবেশ পথ ধরে উপরে উঠলে আয়তাকার ক্ষেত্রের মাঝখানে এই বিহারে মূল মন্দিরটি দেখতে পাওয়া যায়। এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য হলেন ধ্যানী বুদ্ধ অক্ষোভ্য। এখানে ৩য় নির্মাণ যুগে নির্মিত একটি মস্তকবিহীন বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। ইটাখোলা মুড়া থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনের মধ্যে প্রায় ১৮ তোলা ওজনের স্বর্ণ, মাটির পাতিলে রক্ষিত সোনার বল, রৌপ্য মুদ্রা, তাম্রশাসন, মাটির ফলকলিপি, ধ্যাণী বুদ্ধ মূর্তির আবক্ষ অংশ, ধাতব ধ্যানীবুদ্ধ অক্ষোভ্য, ধাতব ধ্যানীবুদ্ধ অমিতাভ, গণেশ মূর্তি, অলংকৃত পোড়া মাটির ফলক, মাটির পাত্র, তেলের প্রদীপ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
রূপবান মুড়া
কোটবাড়িতে ইটাখোলা মুড়ার ঠিক উল্টো পাশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটির নাম রূপবান মুড়া। রহিম ও রূপবানের ভালোবাসার কিংবদন্তিতে প্রচলিত আছে এই ঐতিহাসিক স্থান ঘিরে। ৯০-এর দশকে কুমিল্লা-কালিবাজার সড়কের কাছে আবিষ্কৃত হয় এই প্রত্নস্থানটি। এখানে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সপ্তম থেকে ১২শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়।
রূপবান মুড়ার উঁচু বিহারের উপর থেকে সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ভীড় জমান পর্যটকরা। কোটবাড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে যেতে হবে কুমিল্লা-কালির বাজারের পথে। এরপর দক্ষিণ দিকে বিজিবি ও বার্ডের মাঝখানে টিলার ওপর দেখা যাবে নয়নাভিরাম রূপবান মুড়া।
ডাইনো পার্ক
কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ির জামমূড়ায় লালমাই পাহাড়ের ১২ একর জায়গা নিয়ে ডাইনোসর পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। সমতল ভূমি থেকে ৪৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত মনোমুগ্ধকর এই থিম পার্কে হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ডাইনোসরেরা চলাফেরা করে। ডাইনোসর পার্ক নাম হলেও ডাইনো পার্ক (Dino Park) নামটি ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র।
ডাইনো পার্কের প্রধান আকর্ষন ডাইনো জোনে যেতে চাইলে রংধনু সিঁড়ির ৪০ ধাপ বেয়ে টিলায় চড়তে হবে। ডাইনোসর গুলোর মটরাইড নড়াচড়া ও গর্জন দর্শনার্থীদের অনেক আনন্দিত করে। প্রতিটি ডাইনোসরের নিচে তাদের ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য দেয়া আছে। ডাইনো জোনের পাশেই একটি কৃত্রিম ঝর্ণা রয়েছে।
ডাইনোসর ছাড়াও ডাইনো পার্কে আছে বাম্পার কার, রোলার কোষ্টার, প্যারিস হুইল, ড্রাগন কোস্টার, অক্টোপাস, মেরিগো রাউন্ড সহ বেশকিছু আকর্ষণীয় রাইড, কিডস জোন, দ্যা হিল ক্যাফে রেস্টুরেন্ট, কার পার্কিং এবং পিকনিক আয়োজনের সকল ব্যবস্থা। ডাইনো পার্কের প্যারিস হুইলটি Eye Of Lalmai (লালমাইয়ের চোখ) নামে পরিচিত। প্যারিস হুইলের ১০০ ফুট উচ্চতা থেকে লালমাই পাহাড়ের অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ডাইনো পার্ক খোলা থাকে। বছর জুড়ে এখানে প্রবেশ ও রাইড সহযোগে বিভিন্ন প্যাকেজ এবং অফার চালু থাকে। ডাইনো জোন সহ ডাইনো পার্কের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০০ টাকা। বড়দের জন্য বিভিন্ন রাইড ফি ১০০ টাকা, ছোট বাচ্চাদের জন্য ৫০ টাকা।
আপনি যদি অনেক দূর থেকে ডাইনো পার্কে ঘুরতে আসেন সেক্ষেত্রে খরচ ও সময়ের হিসেব আপনার জন্যে ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে। তাই সবচেয়ে ভাল হবে যদি ডাইনো পার্ক দেখার পাশাপাশি কাছাকাছি অবস্থিত অন্যান্য দর্শনীয় স্থান যেমন শালবন বিহার, ময়নামতি জাদুঘর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাজিক প্যারাডাইস, নব শালবন বিহার প্রভৃতি ঘুরে দেখা।
নান্দনিক বর্গাকৃতির বিশাল অবকাঠামোর ঠিক মাঝখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্দির এবং অপরূপ এক দিঘি। কুমিল্লা সদর থেকে কোটবাড়ির আনন্দ বিহার যাবার পথে বিখ্যাত টমছম ব্রিজ দেখে নেয়া যেতে
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী(বার্ড)
কুমিল্লা জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বা বার্ড (Bangladesh Academy for Rural Development, BARD) একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত গবেষণা ও প্রশিক্ষণ একাডেমী। ১৯৫৯ সালের ২৭ মে পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার কর্তৃক পাকিস্থান গ্রাম উন্নয়ন একাডেমি নামে যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে পল্লী গবেষক ড. আখতার হামিদ খান বার্ড নামকরণ করেন। প্রায় ১৫৬ একর ছায়া সুনিবিড় প্রাকৃতিক পরিবেশে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর অবস্থান। বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি ও ফুলের বাগান রয়েছে একাডেমীর চারপাশে। এছাড়া বার্ডের বিশাল কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি হোস্টেল, চারটি কনফারেন্স রুম, মসজিদ, লাইব্রেরী, হেলথ ক্লিনিক, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, দুইটি ক্যাফেটেরিয়া ও একটি প্রাইমারী স্কুল। স্বায়ত্ত্বশাসিত এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তাদের ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন হয়ে থাকে। আর বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে এখানে পিকনিক আয়োজনের যাবতীয় সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন হতেই বার্ড বিভিন্ন গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গ্রামীণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। ১৯৬০ সালে গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ভাবে কুমিল্লা মডেলকে উন্নয়নশীল দেশের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে বার্ড বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছিল।
ফান টাউন পার্ক:
বিনোদনের নতুন আয়োজন নিয়ে কুমিল্লা জেলার ঢুলিপাড়াতে ২০১৬ সালে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ভার্চুয়াল থীম পার্ক ফান টাউন (Fun Town)। ভিন্ন ধাঁচে নির্মিত এই পার্ক ছোট বড় সব বয়সী মানুষের নির্মল বিনোদনের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা। পার্কের মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও আকর্ষণীয় রাইডের মজা নিতে ছুটির দিনে অনেকে এই পার্কে আসেন। ১৫ ডি সিনেমা ফান টাউন পার্কের প্রধান আকর্ষণ হলেও ছোট বাচ্চাদের জন্য এখানে রয়েছে নাগরদোলা, ট্রেন, বাম্পার কার, প্যাডেল বোট, সুইং চেয়ার, মেরিগো রাউন্ড, সেল্ফ কন্ট্রোল এরোপ্লেন সহ বিভিন্ন ইনডোর ও আউটডোর রাইড। আর বিশেষ দিন গুলোতে ফান টাউন পার্ক কনসার্ট, ডিজে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় আয়োজনে পূর্ণ থাকে।
প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত উন্মুক্ত ফান টাউন পার্কে প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। এছাড়া পার্কের বিভিন্ন রাইডের ভাড়া-
ফান টাউনে যাওয়ার জন্য প্রথমে কুমিল্লা শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে কুমিল্লা শহর যাওয়া যায়। তবে রয়্যাল কোচ, এশিয়া এয়ারকন, প্রিন্স, এশিয়া লাইন, তৃষার মতো নন-এসি বা এসি বাসে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়া সুবিধাজনক। বাসভেদে ভাড়া লাগবে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বাস থেকে নেমে সিএনজি অথবা রিক্সায় কুমিল্লার ইপিজেড হয়ে ঢুলিপাড়া চৌমুহনি থেকে সামান্য দক্ষিণে এগোলেই ফান টাউনে পৌঁছে যাবেন।
আবার কুমিল্লার টমটম ব্রিজ থেকে অটোরিকশায় কুমিল্লা এয়ারপোর্ট রোড থেকে সহজেই ফান টাউন যাওয়া যায়।
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি
কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র বা ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৩৭ জন সৈন্য চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। যার মধ্যে যুদ্ধে নিহত সৈন্য ছাড়াও ২৪ জন জাপানি যুদ্ধবন্দি এবং ১ জন বেসামরিক ব্যক্তি রয়েছে। কুমিল্লা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের টিপরা বাজার ও ময়নামতি সাহেব বাজারের মধ্যস্থলে প্রায় ৪.৫ একর পাহাড়ি ভূমির উপর অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি বাংলাদেশের ২য় কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র। স্থানীয় মানুষের কাছে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ‘ইংরেজ কবরস্থান’ হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং ইহুদির কবর রয়েছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে নিহত এবং যুদ্ধাহত হয়ে মারা যাওয়া সৈনিকদের ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদায় ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের বাদশা মিয়া চৌধুরী রোডে ৭৫৫ সৈনিকের এমন আরেকটি কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র রয়েছে।
ঈদের ২ দিন ব্যতীত সারাবছর সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি সকলের জন্য উম্মুক্ত থাকে। তবে প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত সাময়িক বিরতিতে সমাধিস্থল বন্ধ থাকে।
দেশের যেকোন জায়গা থেকে কুমিল্লা এসে সিএনজি অথবা বাসে করে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে যাওয়া যায়।
ময়নামতি যাদুঘর
কুমিল্লা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে সালমানপুরে অবস্থিত ময়নামতি জাদুঘর (Mainamati Museum) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহশালা হিসাবে বাংলাদেশের একটি গুরত্বপূর্ণ স্থান। ময়নামতি জাদুঘরের ৪২ টি ভিন্ন ভিন্ন সংরক্ষণাগারে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর নানা নিদর্শন সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে ব্রোঞ্জ ও পাথরের ছোট-বড় মূর্তি, ব্রোঞ্জের বিশাল ঘন্টা, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জ, তামা ও লোহার সামগ্রী, মাটির খেলনা, কাঠের নিদর্শন, মৃৎশিল্প নিদর্শন এবং প্রাচীন হস্তলিপির পান্ডুলিপি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জাদুঘরকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্রামাগার ও মনোরম ফুলের বাগান।
ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক
ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক (Magic Paradise Park) কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। ওয়াটার পার্ক, ২০টির অধিক রাইড, ডাইনোসর পার্ক, পিকনিক স্পট সহ এই পার্কটি কুমিল্লার সবচেয়ে সুন্দর ও বড় এমিউজমেন্ট পার্ক। বিদেশি কার্টুন ডিজনিকের আদলে তৈরি প্যারাডাইজ পার্কের গেটটি বেশ আকর্ষনীয়। মনোরম পরিবেশের এই পার্কটি ছোট বড় সবার জন্যেই। পার্ক রিভিউ নিয়ে দেখে নিন আমাদের
ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক প্রতিদিন সকাল ৯ টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক এর এন্ট্রি টিকেট ফি জনপ্রতি ৩০০ টাকা। ওয়াটার পার্ক এর প্রবেশ ফি ৩৫০ টাকা, বিভিন্ন রাইডের টিকেট ৫০-১০০ টাকা করে। একসাথে কয়েক রাইড মিলিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ আছে। আপনি চাইলে আলাদা আলাদা ভাবে না টিকেট কিনে একসাথে প্যাকেজের টিকেট ও কিনতে পারবেন। ৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের কোনো এন্ট্রি টিকেট লাগে না।
রানী ময়নামতির প্রাসাদ
কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ধরে পূর্ব দিকে কমনওয়েলথের ওয়ার সিমেট্রি থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার গেলেই দেখা যাবে এই প্রাসাদ। এই পুরাকীর্তিটির নির্মাণকাল ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মাঝের কোনো সময়। সে সময় চন্দ্র বংশের রাজা মানিক চন্দ্র তার স্ত্রী ময়নামতির আরাম আয়েশের জন্য বানিয়ে দেন এই প্রাসাদ।
১৯৮৮ সালে ভূপৃষ্ঠ থেকে তিন মিটার গভীরে থাকা একটি সুড়ঙ্গের সামনে খননের সময় আবিষ্কৃত হয় এই প্রাসাদ। প্রতি বৈশাখের ৭ম দিন থেকে এখানে মাসব্যাপী উদযাপন করা হয়।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি
নওয়াব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়িটি (Foyjunnesa Zamindar Bari) কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে অবস্থিত। তৎকালীন ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা নবাব ‘ফয়জুন্নেসা চৌধুরানি’ ১৮৭১ সালে এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ছোটখাটো কিন্তু বেশ চমৎকার সুন্দর বাড়িটি যার মূল বাড়িটি দক্ষিণমুখী। তার পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে বৈঠকখানা। বাড়ির পশ্চিমপাশে রয়েছে মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ। অনেকটা সময় সবুজের সান্নিধ্যে কাটানোর জন্য অনেক ভালো একটা জায়গা। দশ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি ১৯০৩ সালে স্থাপিত, যেটা আসলেই চক্ষু শীতল করার মত।
ফয়জুন্নেসা চৌধুরানি ছিলেন সভ্রান্ত এক মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ে করেন আরেক জমিদার গাজী চৌধুরীকে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আর ঐ বিবাহ বিচ্ছেদের সময় পাওয়া দেনমোহরের এক লক্ষ এক টাকা দিয়ে তিনি নিজে একটি বাড়ি তৈরি করেন। ঐসময় জমিদারীর প্রশিক্ষণ নেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাফল্যের সাথে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তার জমিদারীর আওতায় প্রায় হোমনাবাদ পরগণার বর্তমান সময়ের কুমিল্লা জেলার মোট ১৪টি মৌজা ছিল। ১৪টি মৌজাতে রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৪টি কাছারিঘর ছিল। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী জমিদার।
তাঁর জমিদারীর অধিকাংশ আয় এই নারী শিক্ষার পিছনে ব্যয় করতেন। তার এই সাহসী উদ্যোগ ও সাফল্যের কারণে তৎকালীন ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়া তাকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “নওয়াব” উপাধিতে ভূষিত করেন। যা পুরো ভারত উপমহাদেশে একমাত্র মহিলা হিসেবে তিনি এই উপাধি পান। তিনি ছিলেন একাধারে জমিদার, সমাজকর্মী, লেখিকা।