বিবর্তন রিপোর্ট:
আগামী কাল ৮ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও মেঘনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। অপরদিকে একই দিনে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচন কমিশন এ উপজেলার ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন। ফলে এ উপজেলায় আজ ভোট হচ্ছে না।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন জমে উঠেছে। উৎকন্ঠা, আশংকা বিরাজ করছে উপজেলাজুড়ে। কেন্দ্র দখলের আশংকাও রয়েছে প্রবল।
৮ মে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ আবদুল মান্নান চৌধুরী, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোসাঃ আফরোজা কুসুম।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ( স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাতিঝা) মোঃ আমিরুল ইসলাম, মোঃ মনিরুজ্জামান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শিরিন আক্তার ও বিলকিছ আক্তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর আস্থাভাজন। কিন্তু অপর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ আবদুল মান্নান চৌধুরীও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন এল জি আর ডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এর উন্নয়ন সমন্বয়ক মোঃ কামাল হোসেন ।স্থানীয় সরকার মন্ত্রী কারো পক্ষে না থাকলেও উন্নয়ন সমন্বয়ক মোঃ কামাল হোসেন যেহেতু চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ আবদুল মান্নান চৌধুরীর জন্য কাজ করছেন সেহেতু পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি রয়েই যায়। এছাড়া এ প্রার্থীর পক্ষে মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও জেলা পরিষদের সদস্য, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আমিরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাস্টার সোলাইমান ,উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম আজাদ , উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাশার,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল আজিজ , উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক দেওয়ান জসীমউদ্দীন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান শামীম, সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বিপ্লব রয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা এক সাথে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আবার চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ আবদুল মান্নান চৌধুরীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রার্থীও ঘোষণা করছেন।ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এ উপজেলায় থাকছে না বলে স্খানীয় একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান। অনেকে আশংকা করছেন ভোটের আগে কোন প্রকার সংঘর্ষ না হলেও ভোটের দিন কেন্দ্র দখলের প্রবল আশংকা রয়েছে। ফলে ভোটাররাও আতংকিত হয়ে আছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্তত ৭০টি ভোট কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো ভোটের দিন দখল হওয়ার আশংকা রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষণপুর ইউনিয়ন, বিপুলাসার ইউনিয়ন, হাসনাবাদ ইউনিয়ন, সরসপুর ইউনিয়ন, খিলা ইউনিয়ন, ঝলম দক্ষিণ ইউনিয়ন, মৈশাতুয়া ইউনিয়নগুলো প্রবল ঝুঁকিপূর্ন।স্থানীয় সূত্র আরো জানায়, এসব ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটারদের বাঁধা প্রদান করা হবে , কেন্দ্র দখল, দলীয় প্রভাব, হুমকি-ধমকি প্রদান করা হবে। আনারস প্রতিকের প্রার্থী মোঃ জাকির হোসেনের পক্ষে প্রচারণা করায় সম্প্রতি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউলকে বিপুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবালের নেতৃত্বে বাড়ি থেকে তুলে নেয়া হয়। তারা তাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে আনারসের পক্ষে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তারা রবিউলকে বলেন, টেবিলের উপর দেখিয়ে ভোট হবে। আনারসের পক্ষে কাজ না করার শর্তে তাকে ছাড়া হয়েছে। রবিউল জানায়, আনারসের পক্ষে কাজ করলে আমার দোকান আগুনে পোড়ানো হবে এবং ৮ তারিখের পর আমাকে খুন করা হবে। আমি চরম আতংকে আছি। তারা বলেছে, কোন কেন্দ্রে ভোট হবে না। আনারসের পক্ষে কেউ কাজ করতে পারবে না।
এদিকে ভোট হওয়ার আগেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির হোসেনের নেমপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে থেকে। গত এক সপ্তাহ পূর্বে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজালা রানী চাকমার নির্দেশে অফিস সহকারি শাহজাহান মিয়া এ নেমপ্লেট সরিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।অফিস সহকারি শাহজাহান জানান, আমি একজন সাধারণ কর্মচারি। আমার এতবড় সাহস নেই নিজের ইচ্ছেই নেমেপ্লট খোলার। আমি ইউএনও স্যারের নির্দেশে এক সপ্তাহ পূর্বে উপজেলা চেয়ারম্যান স্যারের নেমপ্লেট খুলেছি।উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজালা রানী চাকমা জানান, আমি কাউকে নির্দেশ দেইনি নেমপ্লেট খোলার জন্য । স্টাফ নেমপ্লেট খুলেছে। নির্বাচন চলাকালিন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা অফিস, গাড়ি, সরকারি বাড়ি ব্যবহার করতে পারে না। কেউ যাতে এসে চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য হয়তো নেমপ্লেট খুলেছে। তবে আমি খোলার জন্য নির্দেশ দেইনি।
উল্লেখ্য যে, ভোট শেষ হওয়ার পর জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার আগে পুরাতন জনপ্রতিনিধির নেমপ্লেট মূলত খুলে ফেলা হয় না। তবে মনোহরগন্জের এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে কিংবা নির্বাচন এক পেশে হওয়ার ইংগিত বহন করছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভোটার জানান, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনে আতংক বিরাজ করছে। বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র দখল হওয়ার আশংকা রয়েছে। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
আজ ৭ মে দুপুরে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি সর্ম্পকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন- সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তিনি কারো পক্ষে না। দলের প্রার্থী কেউ না। আমিও দলের প্রার্থী না। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের অগোচরে উনার নাম ভাংগিয়ে একটা গ্রুপ নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলাটে করছে। তারা মান্নান সাহেবকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করছে। আমার নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে মারধর করছে। কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করছে। সকল কেন্দ্র দখল করবে বলে জানাচ্ছে। এভাবে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে ? সম্ভব না। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে তিনি সাংবাদিক সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযো করেন।
অন্যদিকে, মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেনের মালিকানাধীন নিজ গ্রাম বাকরায় অবস্থিত মৎস ও গরুর খামারে যাতায়াত সুবিধার জন্য পরানপুর থেকে বাকরা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার একটি রাস্তা তৈরি করেন। রাস্তাটি তৈরি করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কোন জমির মালিককে দেওয়া হয়নি কোন নোটিশ/ক্ষতিপূরন। জাকির হোসেনের ক্ষমতার আধিপত্যে ২/৪জন ছাড়া মুখ খুলছে না বাকী জমির মালিকগণ।
জানা যায়, মনোহরগঞ্জ উপজেলার পরানপুর থেকে বাকরা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। দীর্ঘ নির্মিত রাস্তাটির দু’পার্শ্বে কোন ধরণের ঘর-বাড়ি ও রাস্তাটি দিয়ে মানুষের যাতায়াতের কোন প্রকার প্রয়োজনীতায় না থাকলেও রয়েছে শুধু চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের মালিকানা ও পরিচালনাধীন সুবিশাল মৎস ও গরুর খামার। জাকির হোসেনের খামারটি পরিপূর্ণ করতে রাস্তাটিকে তৈরি করা হয়েছে আঁকা-বাঁকা করে। ক্ষমতা ও আধিপত্যের বিস্তার ঘটিয়ে তৈরি করে নিয়েছেন পরানপুর থেকে বাকরা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের রাস্তাটি অভিযোগ এলাকা বাসীর।
এ বিষয়ে অন্ততঃ ৮/১০জন জমির মালিক জানায়, তাদের বিশাল ক্ষয়ক্ষতির কথা। উপজেলার পরানপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক আব্দুল মান্নানের ছেলে সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমান জানান, আমার সারা জীবনের আয়-উপার্জনের টাকা দিয়ে আমি নাথেরপেটুয়া-হাসনাবাদ সড়কের পাশে সাড়ে ৪০ শতক জায়গা ক্রয় করি। আমাকে না জানিয়ে আমার জায়গাটির উপর দিয়ে ১৪ ফুট প্রশস্ত এল আকৃতি করে জাকির হোসেন রাস্তাটি তৈরি করেন। এতে আমার প্রায় ৩০ শতক জায়গা রাস্তার ভিতর পড়ে যায়, বাকী অংশ গর্ত করে মাটি নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ২২ বছর থেকে সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছি। প্রবাসে থাকার কারণে বহুলোককে বিভিন্ন ভাবে বিষয়টি জানালেও জাকির হোসেন জাকিরের লোকজনের ভয়ে কেউ রাস্তার কাজ বন্ধ করতে পারেনি। আমি বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা পুলিশ সুপার, মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সৌদি আরব অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন মহলে জায়গার ক্ষতিপূরণ ও জাকির হোসেন জাকিরের বিচার চেয়ে আসছি। কিছু দপ্তর থেকে বিষয়টির সঠিক এই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও আমি কোথাও কোন বিচার ও সহযোগিতা পাই নি। মিজানুর রহমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় এলজিআরডি মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি মহোদয়ের কাছে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জাকির হোসেন জাকিরের বিচার দাবি করেন।