বিবর্তন রিপোর্ট:
শেষ মুহূর্তের প্রচার চলছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের। চলছে উত্তেজনাও। সংসদ সদস্যের নামে প্রভাব বিস্তার নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ভোটগ্রহণের দিন কেন্দ্রের পরিবেশ ও নির্বিঘ্নে ভোটার আসা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করছেন তাঁরা। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দাবি, নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষ কঠোর ভূমিকা থাকলেই একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন সম্ভব।
এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাপ-পিরিচ প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার, হেলিকপ্টার প্রতীকে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাবলু এবং আনারস প্রতীকে ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান রিপন। তিনজনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও সাতজন ভাইস চেয়ারম্যান ও তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উপজেলার ৫৫টি কেন্দ্রে আগামী ২১ মে ভোটগ্রহণ হবে। ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৮ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬৯ হাজার ৭০৬ জন ও নারী ৬৪ হাজার ১৬০ জন। হিজড়া ভোটার দুজন।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নেই আলাদা আলাদা প্রভাব রয়েছে। আঞ্চলিকতার প্রভাবে ভোট ভাগাভাগি হবে তিন প্রার্থীর মধ্যেই। এছাড়া রাজনৈতিক সাংগঠনিক গুরুত্ব ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে ভোট ভাগাভাগি নিয়েও রয়েছে সমীকরণ। তাই ভোটাররা বলছেন, ভোট হলে কোথাও একতরফা নির্বাচনের তেমন সম্ভাবনা নেই।
সদর দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপির ভাই ও বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দীর্ঘদিন এই উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে আছেন তিনি।
তবে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই বাবলু এগিয়ে আছেন সামাজিক ও গণযোগাযোগে। দীর্ঘ সময় নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ায় উপজেলার বেশিরভাগ জনগণের কাছেই তিনি সশরীরে ভোট চাইতে গিয়েছেন। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রভাবও পড়বে এই ভোটের লড়াইয়ে। এছাড়া কুমিল্লা মহানগর ঘেঁষা নির্বাচনী এলাকায় হেলিকপ্টার মার্কার আধিপত্য বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, দুই পুরোনো নেতার লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বলে দাবি করছেন নতুন মুখ ইঞ্জিনিয়ার আক্তারুজ্জামান রিপন। আনারস প্রতীকের রিপন সামাজিক কর্মকাণ্ড দিয়ে এলাকায় সুপরিচিত। তাঁর নিজের ইউনিয়ন গলিয়ারা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের ভোটারদের পূর্ণ সমর্থন পাবেন বলে তাঁর দাবি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বাইরের ভোটাররাও রিপনের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়া সারোয়ার-বাবলুর দণ্ডের প্রভাবে ভোটাররা তাকেই ভোট দেবেন বলে প্রত্যাশা তাঁর।
কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী গোলাম সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার এমন কোনো নেতা নেই যে ধমক খায়নি। আমার নেতা-কর্মীদের কাছের আত্মীয়দের মাধ্যমে তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়। প্রত্যেকটি লোককে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। ২২ তারিখের পরে শহরে আসলে দেখে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এজন্য কেউ প্রকাশ্যে আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। মানুষের মনে আতঙ্ক থাকলে ভোটার উপস্থিতি কম থাকবে। আমরা আতঙ্ক দূর করতে পারলেই অনেক ভোটার উপস্থিতি হবে।’
গোলাম সরোয়ার দাবি করেন, সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নাম করে তাঁর নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত ধমকানো হচ্ছে।
এদিকে, হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী আবদুল হাই বাবলু বলেন, ‘এখন ভোট হবে। আমার দিকে ভোটারদের স্রোত দেখে প্রতিপক্ষের দল আবোল-তাবোল বলছে। তারা সিল মারতে পারবে না, ভোটডাকাতি করতে পারবে না, কেন্দ্র দখল করতে পারবে না—এই জ্বালায় তারা এখন পাগলের মতো আবোল-তাবোল বলছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য এমপি-মন্ত্রী স্বজনদের নির্বাচন করতে মানা করেছে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকে আজকে নির্বাচন করছেন। আমি বিশ্বাস করি, নেত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে তাদেরকে ইনশাআল্লাহ জবাব দেবে।’
আনারস প্রতীকের আক্তারুজ্জামান রিপন বলেন, ‘ভোটারদের প্রশ্ন- আমরা কেন্দ্রে যেতে পারব কিনা? কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারব কিনা? কেন্দ্রে প্রবেশ করে আমরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব কিনা? এই জবাব দিতে দিতে আমার দিন শেষ। তাই আমি প্রশাসনকে বলেছিলাম, আপনাদের উদ্যোগে কিছু মূলক প্রোগ্রাম করেন। সাধারণ মানুষকে নিশ্চিত করেন যে আপনারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবেন।’
সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তার ও বহিরাগতদের আধিপত্যের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে কেউ বড় ধরনের অভিযোগ করেনি। নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। অভিযোগ পেলে তাঁরা ব্যবস্থা নিবেন। এখনও নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। আমরা একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য সর্বোচ্চ সচেষ্ট আছি।’
ইতোমধ্যে নির্বাচনী পরিবেশে বিশৃঙ্খলা ঘটনার অভিযোগে গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তলব পেয়েছেন আব্দুল হাই বাবলু। আর বিব্রতকর বক্তব্যের কারণে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের চিঠি দেওয়া হয়েছে গোলাম সরোয়ারকেও।