বিবর্তন রিপোর্ট :
২০ মে সোমবার, “বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস’২৪ পালন উপলক্ষ্যে জাতীয় মান সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), কুমিল্লা ও জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা এর যৌথ আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক জনাব খন্দকার মুঃ মুশফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জনাব মংনেথোয়াই মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), কুমিল্লা ও জনাব ডাঃ নাছিমা আকতার, সিভিল সার্জন, কুমিল্লা। সভাটির সভাপতিত্ব করেন জনাব পঙ্কজ বড়ুয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), কুমিল্লা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিএসটিআই জেলা অফিস, কুমিল্লার অফিস প্রধান ও উপপরিচালক (সার্টিফিকেশন মার্কস) জনাব কে এম হানিফ।
এ বছর বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘We measure today for a sustainable tomorrow’ যার বাংলা ভাবানুবাদ দাঁড়ায় ‘টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আজকের পরিমাপ’। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উপলক্ষ্যে বিএসটিআই’র কার্যক্রম সংক্রান্ত নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। উক্ত তথ্যচিত্রে বিএসটিআই’র বিভিন্ন কার্যক্রম তথা: বিএসটিআই হতে প্রদত্ত QR Code সম্বলিত সিএম লাইসেন্স/ছাড়পত্র/পণ্য মোড়কজাত নিবন্ধন সনদ প্রদান/নবায়ন, ভেজাল বিরোধী অভিযান, ওজন-পরিমাপক যন্ত্রের ক্যালিব্রেশন/ভেরিফিকেশন সার্ভিস, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার থেকে সেবা প্রদান, ই-অ্যাপ্লিকেশন সার্ভিস, সিস্টেম সার্টিফিকেশনসহ হালাল সার্টিফিকেশন, ইত্যাদি সেবাসমূহের উপর আলোকপাত করা হয়।
আলোচনার শুরুতে বিএসটিআই কুমিল্লা’র অফিস প্রধান কে এম হানিফ বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসের প্রতিপাদ্যের উপর আলোচনা ও বিএসটিআই কুমিল্লা’র কার্যক্রম তুলে ধরেন। পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই এর ক্রমবর্ধমান দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন “কুমিল্লা জেলার গৌরব হিসেবে সুপরিচিতি ও স্বীকৃত জিআই পণ্য “রসমালাই”সহ সরকার কর্তৃক বাধ্যতামূলক নতুন পণ্য হিসেবে বিএসটিআই’র আওতাভুক্ত বিভিন্ন ধরনের “সুইটমিট” পণ্যের বেশ কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে বিএসটিআই জেলা অফিস, কুমিল্লা হতে সিএম লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কুমিল্লা জেলা অফিসে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি (HPLC, GC, AAS, UV, ইত্যাদি) দ্বারা সজ্জিত রসায়ন, পদার্থ ও মেট্রোলজি ল্যাবরেটরী স্থাপনের ফলে বর্তমানে এর রসায়ন ল্যাবরেটরীতে ৭৫ (পঁচাত্তর) ধরনের খাদ্যপণ্যের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাসহ অত্র অঞ্চলের আওতাধীন মুড়িতে ইউরিয়া, সরিষার তেলে ইউরিক এসিড, চানাচুরে আফলাটক্সিন, পোল্ট্রি ও ফিস ফিডে মিশ্রিত উপকরণ থেকে ট্যানারির ক্ষতিকর বর্জ্য হিসেবে আগত ক্রোমিয়াম এবং বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের নমুনায় হেভিমেটাল প্যারামিটারসমূহ পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিএসটিআই জেলা অফিস, কুমিল্লায় স্থাপিত ল্যাবরেটরীর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ অ্যাক্রিডিটেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে জানিয়ে তিনি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রন ও ভেজাল প্রতিরোধে সকলের সার্বিক সহযোগিতা চান।
অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনায় কুমিল্লা, জেলার ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব আনোয়ার হোসেন চৌধুরী; বেকারী মালিক সমিতির সভাপতি জনাব তারেক রহমান ইমতিয়াজ; জুয়েলারী মালিক সমিতির সভাপতি জনাব শাহ মোঃ আলমগীর খান; বাংলাদেশ রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জনাব আলহাজ মোঃ আবু ইউসুফ বাচ্চুসহ নানা শ্রেণীর উদ্যোক্তা/প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে অনন্য সাধারণ অবদান রাখার জন্য বিএসটিআই, কুমিল্লা অফিস সকলস্তরের কর্মকতা-কর্মচারীকে প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আগত উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন “প্রত্যেক উৎপাদনকারীর মনে রাখা উচিত যে আপনি যদি অন্যের খাবারে ভেজাল মিশান আপনার খাবারেও আরেক জন ভেজাল মিশাবে। এটি একটি চক্রাকার প্রক্রিয়া। একইসঙ্গে, তিনি উন্নত বিশ্বে পণ্যের গুণগত মান ও ওজনে কারচুপি নিয়ে সংশয়ে ভুগতে হয় না উল্লেখ করে আমাদের দেশেও চাহিদার প্রেক্ষিতে হালাল সার্টিফিকেশন কার্যক্রমের পরিধি আরো বৃদ্ধি করার উপর জোর প্রদান করেন। মানুষের বিবেকই মান নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার উল্লেখ করে তিনি গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করে তিনি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।”