সৌরভ লোধঃ
নিজেদের অর্থায়নে শিক্ষা-চিকিৎসা-ব্যবসাসহ নানা সুবিধার কথা চিন্তা করে মাঠের মাঝখান দিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক তৈরি করছেন কুমিল্লার বরুড়া পৌরসভা ও উপজেলার ১০ গ্রামের বাসিন্দারা।
উপজেলার খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর থেকে বরুড়া পৌরসভার দেওড়া পর্যন্ত এ রাস্তা নির্মাণ করছেন তারা। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করতে ১৩মে থেকে প্রতিদিন সকালে কোদাল-ঝুড়ি নিয়ে রাস্তা তৈরির কাজে চলে আসে ৫০/৬০ জন মানুষ।অনেক উৎসবমুখর ভাবে সবাই একসাথে কাজে নেমে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, খোশবাস দক্ষিণ ইউনিয়নের জয়নগর এবং আশপাশের ১০টি গ্রামের মানুষকে বরুড়া পৌর সদরে যেতে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। অথচ দেড় কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে দিলেই ভোগান্তি কমে মানুষদের। এছাড়াও বিশাল ওই ফসলের মাঠে জমিতে চাষের জন্য ট্রাক্টর যেতে পারে না। ফসল তুলে বাড়িতে নেওয়ার জন্য কোনো গাড়িও নামার সুব্যবস্থা নেই। এই মাঠের জমিগুলোতে পানির সেচ নিয়েও কৃষকদের ভোগান্তি বেশ। মেয়র চেয়ারম্যানদের দিকে না তাকিয়ে নিজেরাই সে রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেন তারা। তাদের সাথে একাত্মতা করে অন্তত ১০টি গ্রাম থেকে ৬০ জন মানুষ নেমে পড়ে মাটি কেটে রাস্তা তৈরিতে। রাস্তাটি তৈরিতে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ বিভিন্ন পরিমাণে জমি দান করেছেন। জমিদানে কেউই ভিন্নমত পোষণ করেনি।
রাস্তাটি তৈরির অন্যতম উদ্যোক্তা পৌরসভার দেওড়া গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন,
আমাদের এই কাজটি ১৩মে থেকে শুরু হয়েছে। সমাপ্ত হতে কতদিন লাগবে জানা নেই। প্রতিদিন প্রায় ৫০/৬০ জন কাজ করছে।সবাই বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা করা হবে। এতে করে পৌরসভার সাথে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন দক্ষিন খোশবাসের যাতায়াতের সুবিধাভোগ করবে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ।
পৌরসভার বাসিন্দা দিদারুল আলম বলেন, বরুড়া পৌরসভার দেওড়া থেকে জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যায়।এতদিন অনেকটা পথ ঘুরে তারা স্কুলে যেত।এখন এই রাস্তাটি সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে ছাত্রছাত্রীরা কম সময়ে এবং অল্প পথ হেঁটেই পৌরসভা থেকে দক্ষিন খোশবাস ইউনিয়নের জয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে পারবে।
খোশবাস দক্ষিন ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের এই ইউনিয়ন থেকে বরুড়া পৌরসভায় যেতে যাতায়াতের অনেক সমস্যা। অনেক টা পথ ঘুরতে হয়।এই রাস্তাটি হলে যাতায়াতের সুব্যবস্থা হবে।
বরুড়া পৌরসভার মেয়র বকতার হোসেন বলেন, তাদের এই মহৎ কাজ দেখে আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে গেছি। এখনো অনেক ভালো মানুষ সমাজে আছে। তারা আমাকে প্রথম থেকে বিষয় টা অবগত করেনাই। তারপরও আমি জানতে পেরে রাস্তার কাজ দেখতে গিয়েছি। শ্রমিকের চায়ের বিলটাও তারা নিজেরাই দিচ্ছে।তারপরও আমি এই কাজের জন্য কিছু টাকা দিবো তাদের বলে আসছি। পরবর্তীতে আমার পৌরসভার বরাদ্দ আসলে আমি ইটের সলিং করে দিবো এই রাস্তাটা।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু এমং মারমা মং বলেন, আমি শুনেছি রাস্তাটির বিষয়ে। আমি সরেজমিনে পরিদর্শনে যাব, পরে বিস্তারিত জানাব।