বিবর্তন রিপোর্ট :
কমিশনের টাকার বিনিময়ে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিকে সরবরাহ করার দালাল চক্র সবসময় সক্রিয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা সহজ সরল রোগীদের টার্গেট করে সেবার নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারকচক্র।
পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সক্রিয় এই চক্রে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম লিখে ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে রোগীদের কাছে ঘেষেন তারা। দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে দেয়া এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে নারীদের এই চক্রটি রোগীদের নিয়ে যায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকে নানান ভাবে ঠকে ফিরতে হয় রোগীদের।গতকাল সোমবার দুপুরে নানান প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে দুই নারী দালালকে আটক করেছে হাসপাতালের আনসার সদস্যরা।
তাসলিমা বেগম ও ইক্বরা আক্তার নামে ওই দুই নারীকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হয়। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মোশারফ হোসেন ভ্রাম্যমান আদালতে তাসলিমা বেগমকে ১০ দিনের জেল এবং কলেজ শিক্ষার্থী হওয়ায় মানবিক বিবেচনায় ইক্বরা আক্তারকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন।কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনসার কমান্ডার মোঃ মোসলেম উদ্দিন জানান, চাঁদপুর জেলার কচুয়া এলাকা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন আবদুর রহমান।
এসময় আবদুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাসলিমা বেগম নামে ওই নারী আবদুর রহমানের স্ত্রী ও মেয়েকে ভুলিয়ে পাশের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে ৬টি পরীক্ষা করানোর কথা বলে ৪টি পরীক্ষা করিয়ে তাদেরকে ফেরত পাঠায়। পরবর্তীতে তাসলিমা বেগম নামে ওই নারীকে খুঁজে না পেয়ে আনসারের সহযোগিতা নেয়া হয়। পরে আনসার সদস্যরা তাসলিমা বেগমকে আটক করে এবং তার কাছ থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়।
ভুক্তভোগী আবদুর রহমান জানান, আমরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছি পাশের জেলা চাঁদপুর থেকে। আমার স্ত্রী অসুস্থ। হাসপাতালে আসার পর এক নারী আমাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল লেখা একটা কার্ড দিয়ে জানায়- সে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে দিবে। আমার মেয়ে তাতে রাজি হলে – আমরা সেখানে যাই। পরে সেখানে ৬টা পরীক্ষার জন্য আমার কাছ থেকে ৩ হাজার ৬ শ টাকা রাখা হয়। পরে দেখি আমাকে ৪টি পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। আমরা তো কিছু চিনি না, একজন এসে যখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল লেখা কার্ড দিয়েছে ভাবলাম তিনি এখানকার কেউ।আটক তাসলিমা বেগম জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেই হেলথ্ ভিউ ডায়গনস্টিক নামে একটি প্রতিষ্ঠানে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন তিনি। তার কাজ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগীদের নিয়ে ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া।অপর দিকে রোগীদের চিকিৎসক দেখিয়ে দেবার কথা বলে অগ্রিম টাকা তোলার অপরাধে ইক্বরা আক্তার নামে এক তরুনীকে আটক করা হয়।
ইক্বরা জানায়, সে একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত। পরিচিত একজনের কাছে চাকরি চাইলে তাকে রোগীদের বুঝিয়ে ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল দেয়ার কাজ দেয়া হয়। সে আজই প্রথম আসে হাসপাতালে এবং আনসার সদস্যদের হাতে।কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, আটকৃতদের মধ্যে একজনকে ১০ দিনের জেল দেয়া হয়েছে এবং অপর একজনকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে কমিশনের নামে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিকে নিয়ে যাওয়া দালাল চক্রকে নিয়ে অভিযোগ আছে সব সময়ই। এখন প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোঁখ ফাঁকি দিতে এখন নারীদের ব্যবহার করছে ওই চক্রটি। যাদের খপ্পরে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নিশাত সুলতানা বলেন, ‘আমরা দালাল নির্মূলে কাজ করছি। কিন্তু অনেক সময় তাদেরকে চিনলেও আমরা কিছু করতে পারি না। তারা আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলে। আমরা অনেককে ধরে পুলিশে দিয়েছি। তারপর তারা কিভাবে যেন ছাড়া পেয়ে যায়। এরই মধ্যে কয়েকজন দালালকে জেল – জরিমানা করা হয়েছে’।