মেয়র ছাড়াই চলছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। কুমিল্লা সিটি মেয়র কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুর পর একরকম অভিভাবকহীন রয়েছে কুমিল্লা সিটি। নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
সে অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশনার। চলতি বছরের এপ্রিলের শেষদিক অথবা মে মাসের প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানটি হতে পারে। আর তাই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরপরই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সাথে স্থানীয়ভাবে দল বা প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানামুখী নির্বাচনী তৎপরতা। চলছে নানা মেরুকরণ।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মূলত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ একাধিক নেতা ও বহিষ্কৃত বিএনপির দুই নেতার নাম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অন্যদিকে কুমিল্লা সিটি মেয়র পদে নির্বাচন করার কোনো তৎপরতা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীর অবস্থান আলোচনার মধ্যে নেই। এছাড়া এ দু’দলের বাইরে থেকে কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার সামর্থ্য নেই বলেও মনে করেন নগরীর সচেতন ভোটাররা।
কুসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে কারও বিজয়ের নিশ্চয়তা অনেকটাই নির্ভর করছে দলীয় মনোনয়নের ওপর। আর আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে তো এটা অপরিহার্য। যার ধারাবাহিকতায় ভোটের মাঠ জমার আগেই জমে ওঠে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া।
নগরবাসী মনে করে, সর্বজন গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিতে না পারলে কুমিল্লায় মেয়র পদে বিজয় ছিনিয়ে আনা এবার বেশ কঠিন হবে। এখানে জয়লাভের ক্ষেত্রে সব সময়ই কাজ করে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ক্লিন ইমেজ। ভোটাররাও সব সময় মনে করেন, এমন ক্লিন ইমেজের নেতা মেয়র হয়ে আসুক, যার দরজা জনগণের জন্য সব সময় থাকবে খোলা।
আসন্ন উপনির্বাচনে নির্বাচনে কুমিল্লা সিটি মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, স্বতন্ত্র হিসেবে কারা মেয়র পদে লড়তে পারেন, সেসব নিয়ে উৎসুক্য জনতার মাঝে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম, স্থানীয় সংসদ সদস্য আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা তাহসিন বাহার সূচনাসহ কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্ল্যাহ খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুর রহমান, ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্র সংসদের ভিপি মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সাবেক সভাপতি কবির ইসলাম শিকদার, আনিসুর রহমান মিঠুসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার তালিকায় রয়েছেন বলে নগরবাসীর ধারণা।
সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক নেতা নিজামুদ্দিন কাউসারের অনুসারীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারে ভাব প্রদর্শন করছেন সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নির্বাচনমুখী নানা তৎপরতায় তারা ভোটে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। বরাবরের মতো কুসিক নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তার সমর্থন বাদ দিয়ে এখানে নির্বাচনী সমীকরণ করা কঠিন বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক ও নগর বিশ্লেষকরা।
এদিকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে কুমিল্লার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খাঁন পরিবারের সাথে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীনের বাহারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীর আলোচনার তালিকা থেকে বাদ পড়েননি কুমিল্লা-৬ সদর আসনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। যদিও কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচনে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেননি খান পরিবারের কেউ।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বহুমুখী উন্নয়নের জন্য ১৫শ ৩৮ কোটি টাকার একটি বরাদ্দ রয়েছে সরকারের। সাম্প্রতিক সময়ে বরাদ্দের কিছু কাজ চলমান রয়েছে, অধিকাংশ কাজই এখনো শুরু হয়নি, তাই এবার কুমিল্লা সিটি মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু প্রার্থীরা প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়াসহ বিজয়ের ক্ষেত্রে নিজের সবটুকু শক্তি প্রয়োগ করবেন বলে মনে করেন কুমিল্লার নগর বিশ্লেষকরা। সাথে নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারি বরাদ্দের সুষ্ঠু প্রয়োগে কুমিল্লা নগর উন্নয়নে নিজেদের আত্মনিয়োগ করবেন বলেও মনে করেন নগরবাসী।