বিবর্তন নিউজ:
কুসিক নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তার সমর্থন বাদ দিয়ে এখানে নির্বাচনী সমীকরণ করা কঠিন বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক ও নগর বিশ্লেষকরা।এদিকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে কুমিল্লার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খাঁন পরিবারের সাথে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীনের বাহারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীর আলোচনার তালিকা থেকে বাদ পড়েননি কুমিল্লা-৬ সদর আসনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। যদিও কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচনে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেননি খান পরিবারের কেউ।কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বহুমুখী উন্নয়নের জন্য ১৫শ ৩৮ কোটি টাকার একটি বরাদ্দ রয়েছে সরকারের। সাম্প্রতিক সময়ে বরাদ্দের কিছু কাজ চলমান রয়েছে, অধিকাংশ কাজই এখনো শুরু হয়নি, তাই এবার কুমিল্লা সিটি মেয়র নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু প্রার্থীরা প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়াসহ বিজয়ের ক্ষেত্রে নিজের সবটুকু শক্তি প্রয়োগ করবেন বলে মনে করেন কুমিল্লার নগর বিশ্লেষকরা। সাথে নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারি বরাদ্দের সুষ্ঠু প্রয়োগে কুমিল্লা নগর উন্নয়নে নিজেদের আত্মনিয়োগ করবেন বলেও মনে করেন নগরবাসী।কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) উপ – নির্বাচন আগামী ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলে এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান। এর পর থেকেই মেয়র পদে নৌকার মনোনয়ন কে পাচ্ছেন– তা নিয়ে কুমিল্লা নগর জুড়ে চলছে গুঞ্জন। আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্রসহ মেয়র প্রার্থী হতে আলোচনায় আছেন এক ডজন প্রার্থী। এর মধ্যে কুসিকের টানা দু’বারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর (কুসিক) মেয়র আরফানুল হক রিফাত মারা যান। পরে ১৮ ডিসেম্বর মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল-আমিন সাদী।২০১১ সালের ১০ জুলাই যাত্রা শুরু হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের। পরের বছর প্রথম এবং ২০১৭ সালে দ্বিতীয় সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। ২০২২ সালের ১৬ মে পর্যন্ত সাক্কু মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুন কুসিকের তৃতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত মেয়র নির্বাচিত হন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাক্কু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এখনও তাদের দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। এবারও উভয় প্রার্থী উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রতীকে অংশ নেবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, সংসদ নির্বাচনের মতো কুসিক ভোটেও দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াকে দল মেনে নিলে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারেন। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তারা হলেন– দলের মহানগর কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ও কুমিল্লা আদালতের পিপি জহিরুল ইসলাম সেলিম,কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগ এর ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিনের মেয়ে তাহসীন বাহার সূচনা, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ শহীদ, আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম, দলের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য আনিছুর রহমান মিঠু, এফবিসিআই পরিচালক ও কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স সভাপতি ডা. আজম খান নোমান এবং প্রয়াত মেয়র রিফাতের স্ত্রী অধ্যাপিকা ফারহানা হক শিল্পী।নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন ‘তপসিল ঘোষণা হয়েছে, আর সিটি করপোরেশনের মাঠ তো আমার জন্য নতুন না। তাই এখানে আগাম প্রস্তুুতির দরকার নাই। পরে সিদ্ধান্ত জানাব।’ এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন কোনো দলে নেই, নগরবাসীর দোয়া নিয়ে স্বতন্ত্র প্রতীকে উপনির্বাচনে অংশ নেব।’মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাহমুদ তানিম বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হয়ে কুমিল্লাকে একটি মডেল শহরে রূপান্তর করব ইনশাআল্লাহ।’ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দলের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা থেকে আজও আওয়ামী লীগে আছি। উপনির্বাচনে নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব, আশা করি দল বিবেচনায় নেবে।’মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা প্রতীক উপহার দেবেন, আমরা সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে বিজয়ী করতে ঐক্যবব্ধ হয়ে কাজ করব।’