কুমিল্লা অবৈধ হাসপাতালে
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা
হাসপাতাল মালিকের জেল,
বন্ধ হয়েছে ছোটবড় ২৭ টি হাসপাতালও ক্লিনিক।
কুমিল্লানগরী সহ জেলার উপজেলা গুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক।
আজ ২৪ জানুয়ারী কুমিল্লা সদর উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় কালির বাজার ইউনিয়নের কালির বাজার মডেল হাসপাতালটি পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক লিটন দেবনাথকে ক্লিনিকটিতে অবৈধভাবে ফার্মেসি, অপারেশন, রোগী ভর্তি, রক্ত সঞ্চালন, অনুমোদন বিহীন রক্ত পরীক্ষা, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং প্রভৃতি সহ এবং নিজেই চিকিৎসক সেজে রোগীদের প্রেসক্রিপশন প্যাডে চিকিৎসা প্রদান করার কারণে তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন আদর্শ সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জনাব রোমেন শর্মা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএইচএফপিও ডাঃ আহমেদ মঞ্জুরুল ইসলাম, কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ মেহেদী হাসান, মোঃ আমিরুল ইসলাম, (উপ পুলিশ পরিদর্শক) ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ি, জীবন চক্রবর্তী (হেলথ ইন্সপেক্টর), আবুল কালাম আজাদ (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর)।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সমূহের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। কোন অসঙ্গতি পেলে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে। আমরা আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিচ্ছি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, “মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে, মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সকল আদেশ বাস্তবায়নে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সদা প্রস্তুত। কুমিল্লার আদর্শ সদরে প্রতি মঙ্গলবার জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি বিষয়ক অভিযোগ সমূহ উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসে সরাসরি দাখিল এবং গন শুনানির ব্যবস্থা রয়েছে। বিধি মোতাবেক সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং বেসরকারি পর্যায়ে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত অভিযানসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস, গ্রামীন কল্যাণ জাগুল ঝুলি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিদর্শনের আবেদনের ভিত্তিতে পুনঃ পরিদর্শনে গিয়ে, সেখানে পরিচালিত ফার্মেসিটির নিবন্ধন না থাকায় তা বন্ধ করা হয়।
লাইসেন্সবিহীন এসব অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযানে নামতে কুমিল্লায় ১০৭ টি হাসপাতালের তালিকা করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর আগে বেশ কয়েক দফা অভিযান শুরু হলেও তা ঝিমিয়ে পড়েছিলো। নানামুখী তদবিরে মুখ থুবড়ে পড়ে এসব অভিযান। তবে, সম্প্রতি আবারো অভিযানে ২৬ টি অবৈধ হসপিটালে ও ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রে জানা যায় ‘ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা গত কয়েকদিনে কুমিল্লা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশ কিছু জায়গায় লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিককে সিলগালা ও নানা অনিয়মের অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে।’
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র যায়, গত ৪ কার্যদিবসে কুমিল্লা স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের যৌথ অভিযান পরিচালনায় সদর উপজেলায় ৭টি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালগুলো বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো দুইটি প্রতিষ্ঠানকে সংশোধনের জন্য সতর্ক করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এর আগে তিতাস উপজেলায় নানা অনিয়মের অভিযোগে চার হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। এর কয়েকদিন আগেই নগরীর পুপলার হসপিটালসহ দুই ক্লিনিকে জরিমানা করা হয়।
জানা যায়, কুমিল্লা নগরী ও জেলায় ছোট-বড় মিলে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে প্রায় সাত শতাধিক। এর মাঝে লাইসেন্স হয়েছে ৪৬৬টির। অধিকাংশ হসপিটাল ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই।
এদিকে কুমিল্লা সদরে ১৪টি, দাউদকান্দিতে ১০টি, লাকসামে ৯টি, চৌদ্দগ্রামে ৮টি, নাঙ্গলাকোটে ৭টির, মুরাদনগরে ৪টি, বরুড়ায় ৫টি, বুড়িচংয়ে লাইসেন্স নেই একটির, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৫টি, তিতাসে ৯টি, মেঘনায় ৮টি, মনোহরগঞ্জে ৪টি, লালমাইতে ৬টি, হোমনায় ৫টি, চান্দিনা ৫টির লাইসেন্স নেই।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, আমরা জেলার প্রতিটি উপজেলার অবৈধ হসপিটাল ও ক্লিনিকগুলো অভিযান চালাচ্ছি, কিছু হাসপাতাল অবৈধ, তাই বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাকী প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করে লাইসেন্স হাতে না পেয়েই কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল (রবিবার) আমরা ৭ প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের শর্তপূরণ না করা পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
কুমিল্লা বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইস আবদুর রব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমাদের আগে উচিত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স গ্রহণ, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা আগেই প্রতিষ্ঠান খুলে বসি। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন, আশা করি কুমিল্লার লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় কুমিল্লায় পরিচালিত অভিযানে ২৬ টি হাসপাতাল-ল্যাব ও থেরাপি সেন্টার বন্ধ করা হয়। জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তালিকা দেখে প্রতিটি উপজেলা অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মাদ আলমগীর খান বলেন,
, অবৈধ হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর তালিকা তৈরি করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। তাতে করে অবৈধভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিষয়ে মানুষ সচেতন থাকবে।