বিবর্তন ডেক্স:
কুমিল্লার দুটি উপজেলায় বেগুন চাষ করে খরচই তুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন চাষীরা।বুড়িচং ও দেবিদ্বারের চাষীদের ভাষ্য, বাজারে যে পরিমাণ বেগুন নিয়ে যান, তা বিক্রি করে গাড়ি ভাড়াও জোগাড় করতে পারেন না। এমন বাস্তবতায় আগামী বছর আর বেগুন চাষ করবেন না।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় সরকার এখন কৃষি শেড তৈরি করছে, যেখানে কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন। এ কার্যক্রম যখন বাস্তবায়িত হবে, তখন কৃষকরা উপকৃত হবেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।’
বুড়িচং উপজেলা বেগুন বেশী চাষ হয় এমন একটি গ্রাম মিথলমা’র কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৩৬ শতক জমিতে শিংনাথ বেগুন চাষ করি। গাছে ফলন ভালো হয়। ৩৬ শতক জমিতে বেগুন চাষ করতে আমার অন্তত দুই লাখ টাকা খরচ হয়।
‘ভালো ফলনে স্বপ্ন দেখেছি ভালো মুনাফার, তবে বাজারে দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে দাম পাচ্ছি না। আমরা নিমসারসহ বিভিন্ন বাজারে বেগুন পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারছি না।’
কৃষক মিজানুর বলেন, ‘এ সপ্তাহে ১০০ কেজি বেগুন নিয়ে বাজারে যাই। বহু অনুনয়-বিনয় করে পাঁচ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করি। ১০০ কেজি বেগুন ৫০০ টাকায় বিক্রি করি।
‘এ টাকায় কৃষি শ্রমিকের মজুরি, গাড়ি ভাড়া দিয়ে শেষ হয়েছে। বাজার থেকে ফেরার সময় নিজের পকেট থেকে আরও ২০০ টাকা খরচ করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি বেগুন চাষ করে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, আগামীতে আর বেগুন চাষ করব না। পাশের বাড়ির আমার এক ভাই ২০০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করেছে।’
এদিকে, বেগুনের বর্তমান বাজার মূল্য কমে যাওয়া এবং কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে বুড়িচং কৃষিকর্মকর্তা আফরিনা আকতার বলেন, প্রথমত এবার রমজানকে উপলক্ষ্য করে এ এলাকার কৃষকরা বেগুন চাষে একটু বেশী আগ্রহী হয়। উন্নত বীজ ও কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগের তুলনায় বেশী ফলন পায় কৃষকরা।রমজানের প্রথম দিকে চাষীরা বেগুনের দাম তুলনামূলক বেশী পেয়েছে; যেমনটা এখন পাচ্ছে না।
এদিকে, বেগুনের বাজার মূল্য সংকটের বিষয়ে সচেতন সহল বলছেন, রপ্তানি যোগ্য এ বেগুন ফসলটি বছরে অন্য সময়ে রপ্তানি করা হয়, কিন্তু প্রতি রমজান মাসে দেশের বাইরে রপ্তানি বন্ধ রাখা হয়।
রমজানকে সামনে রেখে কুমিল্লার কয়েকটি উপজেলা সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আগ্রহী কৃষকদের বেগুন চাষে ফলন বেড়ে যাওয়াতে মূলত: বেগুনের বাজার মূল্যের এ সংকট দেখা দিয়েছে।
বেশী বেগুন চাষ হয় বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার ব্লকে সেই ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার ফারুক আহমেদ ভূইয়া জানান, আমার এলাকায় কৃষকরা এবার বেগুন চাষ বেশী করেছে। কারন ছিল রমজান মাস। এ মাসে বেগুনের দাম বেশী পেয়ে লাভবান হবেন। কিন্তু এবার একটু চাষের মাত্রা চাহিদার তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় বাজারমূল্যটা কৃষকরা সেই ভাবে পাচ্ছে না।
তবে তিনি জানান,কৃষকরা বিভিন্নশাকসব্জির বেলায় এক ধরনের ওষধ ব্যবহার করে যা বেগুন গাছেও ব্যবহার করা যায়, তা হলো,গাছ যখন ফলন বেশী দিতে থাকে তখন ওষধটি গাছে ব্যবহার করে ফলনের গতিরোধ করা হয, বাজারে চাহিদা বাড়লে প্রয়োজনীয় সার কীটনাশক দিয়ে ফলনের গতি আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় বলে জানান তিনি। এবার বেগুনের ক্ষেত্রে এ এলাকার কতিপয় কৃষকরা ফলনের গতিরোধ করতে বেগুন গাছে তা ব্যবহার করেছে।
তাছাড়া, অনেক কৃষকরা ক্ষেত থেকে বেগুন সংগ্রহে একটু সময় নিয়ে বাজার মূল্য পাওয়ার আশায় রয়েছে।
এদিকে কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার ব্রাহ্মণখাড়া গ্রামের সায়েদ আলী বলেন, ‘৩৬ শতক জমিতে বেগুন চাষ করি। বাজারে নিয়ে গেলে চার থেকে পাঁচ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়। শ্রমিক, সার, বীজসহ যেসব খরচ হয়েছে, বেগুন বিক্রি করে তার অর্ধেক খরচও আসবে না।’হতাশার একপর্যায়ে বেগুন ছিঁড়ে মাঠে ছুড়ে ফেলেন সায়েদ আলী।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় সরকার এখন কৃষি শেড তৈরি করছে, যেখানে কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন। এ কার্যক্রম যখন বাস্তবায়িত হবে, তখন কৃষকরা উপকৃত হবেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি, তারা যখন কৃষি পণ্য বিক্রয় করবেন তারা যেন তাদের মোবাইল ফোন নম্বরটাও দিয়ে দেন। এতে করে আমরা যখন অভিযান করব, তখন যেন কৃষকদের ফোন করে বিক্রয়কৃত ফসলের সঠিক দামটা জানতে পারি।’