আহত সজল কর।
বিবর্তনডেক্স :
কুমিল্লার আদালতের সামনে আয়কর আইনজীবি সজল করকে পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত করেছে সন্ত্রাসীরা।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে আদালত থেকে বের হওয়ার পর আদালতের ফটকের সামনে তিনি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। আহত আয়কর আইনজীবি সজল কর কুমিল্লা চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল ইউনিয়নের বাসিন্দা।
আহত সজল করকে প্রথমে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার, পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত সজল করের ভাই সমীর কর সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি ও আমার ভাই কুমিল্লা আদালত থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকে এসে পৌঁছলে একটি মাইক্রোবাস এসে আমাদের পথরোধ করে। পরে মাইক্রোবাস থেকে দ্রুত ৫/৬ জন যুবক হকিস্টিক নিয়ে নেমে আমার ভাই সজলকে বেধম মারধর করে রক্তাক্ত আহত করে। এ সময় আমি ওই মাইক্রোবাসে আমাদের চান্দিনার স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপালের পিএস সমীর সরকার ও এমপি মহোদয়ে আরেক ঘনিষ্ঠ কর্মী আমাদের গ্রামের হারাধন চন্দ্র দাসকে বসা অবস্থায় দেখেছি’।
আয়কর আইনজীবি আহত সজল কর স্বপরিবারে ঢাকা থাকেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন । তিনি মনোনয়ন পত্র জমা দিতে ৫ মিনিট বিলম্ব করায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান নি বলে সজল কর জানান।
হাসপাতাল চিকিৎসাধীন আহত সজল কর আরো জানান, গত ৬ মাস আগে স্থানীয় সংসদসদস্য ডা: প্রাণগোপাল দত্ত এবং তাঁর সমর্থনে আমার বাড়ীর কাকা- জেঠারা আমাকে আমার নিজের জায়গায় ঘর তুলতে বাঁধা দেয়। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে গিয়ে কোন সহযোগিতা পাই নি। আমি গত ২০২৩ এর সেপ্টেম্বর মাসে এম পি ডা: প্রাণগোপাল দত্ত এবং তার লোকজনের অন্যায়অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে লিখিত ভাবে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বরাবরে তাঁর দপ্তরে একটি আবেদন পাঠাই।
এ ছাড়া আমি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ তাঁর সমর্থক বাড়ীর লোকজনদের বিরুদ্ধে কিছু বিবৃতি দিই আর তা স্থানীয় একটি অনলাইন মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
এম পি সমর্থিত লোকজনের অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে এক পর্যায়ে এম পি মহোদয়ে সমর্থিত আমার আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করলে মামলা খারিজ হয়। পরে আমার প্রতিবেশী স্বজনরা তাদের ভূমি জবরদখলের অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এরপর এম পি মহোদয়ের লোকজনের হুমকি- ধমকির মধ্য দিয়ে আমাকে আমার গ্রামের পৈত্রিক ভিটায় আসা যাওয়া করতে হয়।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লা আদালতে আমি বিবাদি হিসেবে মামলার তারিখে আদালতে আসি। আর আদালতের কাজ শেষে বেরুতেই আমার উপর দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় সূত্র জানায়, আহত সজল কর বিভিন্ন সময় তার বাড়ির জমি দখল, হামলা, মারধর-মামলা নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থক নেতা কর্মীদের লক্ষ্য করে ফেসবুকে নেতিবাচক ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন।
তাঁরা জানান,এমপি প্রাণ গোপালের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল ছিল না। আর এই জন্যই তার উপর হামলা করা হয়েছে বলে তাঁর প্রতিবেশী স্বজনরা ধারনা করছেন। এদিকে আহত সজল করের এ অভিযোগ সম্পর্কে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ প্রাণগোপাল দত্তের পি এস সমীর সরকার এ প্রতিবেদককে জানান, ‘ সজল কর কিংবা সমীর কর তাদের পরিবারের কারো সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। ভাল করে আমি তাদের চিনি ও না। তাছাড়া যতদুর জানি তাদের গ্রাম থেকে আমার গ্রাম অনেক দুরে। বাড়ীর নিকট আত্মীয়স্বজনদের সাথে এদের সম্পত্তিগত পারস্পরিক দ্বন্দ্বের দায় কোন ভাবেই তারা আমার উপর বর্তাতে পারেনা’।
তিনি আরো জানান, ‘তাকে মারধর করার সময় কুমিল্লা আদালত গেইটে দাঁড়ানো কোন গাড়ীতে বসা অবস্থায় আমাকে দেখেছে এমন অভিযোগ ভিত্তি হীন উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং এটি যেমন বানানো তেমনি একটি মানহানিকর মন্তব্য বলে আমি মনে করি। সেদিন আমি কুমিল্লা আদালতেই যাইনি’।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন জানান, এ বিষয়ে আমরা অবগত নই। কেউ এখনো কোন অভিযোগ করেনি।