দিলীপ মজুমদার :
ডেঙ্গু মশাবাহিত ভাইরাল রোগ। সাধারণত বর্ষাকালে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। তবে কয়েক বছর ধরে শুধু বর্ষাকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এডিস মশার আক্রমণ। বছরের অনেকটা সময় জুড়েই থাকছে ডেঙ্গুজ্বর। সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা হলো, বিগত বছর ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি দেখা গেছে। বছরের এ সময়ে কুমিল্লায় সার্বিকভাবে মশার উপদ্রব তেমন ভাবে পরিলক্ষিত হয়নি বলে কয়েকটি ওয়ার্ডের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে। তবে নগরের কিছু কিছু এলাকায় উপদ্রব রয়েছে বলেও অনেকে জানিয়েছেন। তবে নগরের সচেতন মহল প্রত্যাশা করেন, গত বারের চেয়ে কুমিল্লায় এডিস মশাসহ সকল জাতের মশার উপদ্রব কমবে,যদি সিটি কর্পোরেশন কতৃপক্ষ মশক নিধনে সকল ধরণের ব্যবস্থা নিতে আগাম সচেষ্ট থাকে।
এবছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু বাহিত মশা নিধন প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ডভিত্তিক ফগার এবং স্প্রে মেশিন দিয়ে মশা নাশক ওষুধ ছিটানো সহ ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে খুব সচেষ্ট তা জোড় করে বলা যাবে না। বলা যায়, মশা নিধনে বছরের যে কোন সময়ের মতই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে বছর জূড়ে পর্যায়ক্রমে একটি ওয়ার্ডে ৪ টি ফগার মেশিন দিয়ে একাধারে কমপক্ষে ৪-৫ দিন এবং স্প্রে মেশিন ব্যবহার করা হয়। ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ির ড্রেন এবং দুই ভবনের ফাঁকা জায়গা, নালা, মজাপুকুরগুলিতে মশা নিধনে ওষুধ ছিটানো হয়। প্রকৃত পক্ষে এতে কোনরূপ কাজ হয়না বলে জানান ভুক্তভোগী সচেতন কয়েকজন নগরবাসী।
অন্যদিকে ওয়ার্ডগুলোর বাসাবাড়ির আশপাশে থাকা ডাস্টবিনের বর্জ্য সরানোর কার্য্যক্রম এ তৎপর রয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্মীরা। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৪ মাসের একটি বাৎসরিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় নির্ধারণ করা থাকে। এই সময় সিটি কর্পোরেশন নিয়োজিত বর্জ্য সরানোর কাজে নিয়োজিত কর্মীরা নগরের ড্রেন, নালা পরিষ্কারের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সিটি কর্পোরেশন এক সূত্র আরো জানান, বছর জুড়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং মশা নিধন প্রক্রিয়া চালানো হয় সত্য কিন্তু আমাদের সিটি কর্পোরেশনে স্প্রে মেশিন সচল অবস্থায় রয়েছে ১০-১৫টি, ফগার মেশিন ২৩ টির মধ্যে সচল অবস্থায় আছে ৫টি, জানা মতে আরো সহসায় আরো ৫টি ক্রয় করা হচ্ছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম পদক্ষেপ সম্পর্কে কুমিল্লা মহানগরের ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জুর কাদের মনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে মশক নিধনে বছর জুড়েকর্মসূচী রয়েছে নিয়মিত এবং দিনের বর্জ্ব্য দিনেইসরানো ব্যবস্থাসহ মশক নিধনে ফগার এবং স্প্রে মেশিনে ঔষধ ছিটানো, তবে স্প্রে মেশিনে কিছুটা কাজ হলেও আমার ধারনা ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় এডিস নিধনে কোন কাজ করেনা।
এবারের ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধনে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে গেলে কুমিল্লার মেয়র ডা. তাহসিন বাহার জানান, মানুষের বাড়ির আঙিনার ছাদের বারান্দায় ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকে ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টনের কৌটা, ডাবের খোসা বা নারিকেলের মালা, কনটেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল ইত্যাদিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। কাজেই এগুলোর বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেয়া সহ ঘরে বাইরে নষ্ট পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উল্টে রাখা যাতে পানি না জমে এ ধরনের বিষয়ে সতঅক থাকার জন্য পরিবারের ছোট বড় প্রত্যেকটি সদস্যকে সচেতন করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এসব এডিস মশা উৎসস্থলের প্রতি সবার আগে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব এবং করণীয়। আর ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধনে আমাদের কর্পোরেশন কতৃক ব্যবহৃত ফগার মেশিন কিংবা স্প্রে মেশিনের কোনো কার্যকরী ভূমিকা নেই কিংবা থাকতে পারে না। ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় কিছু এনোফেলিশ মশা নিধন হলেও এডিস মশার কোনো ক্ষতি হয় না, এরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে বেঁচে থাকে।
তিনি জানান, এই বিষয়ে দু’এক সপ্তাহেরর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ, সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সুধীমহল নিয়ে একটি সচেতনতামূলক সেমিনার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, যাতে করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবার ও ব্যাক্তির সচেতনতাই ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, এডিস মসার কামড় এড়িয়ে চলতে হলে এডিস মসা সাধারণত আবদ্ধ পরিষ্কার পানিসহ বংশবৃদ্ধির আবাসস্থল বন্ধ করতে হবে। বাসাবাড়ির কাছাকাছি কোথাও এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী পানি জমে আছে কিনা তা খেয়াল রাখার উপর আমরা সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ড ভিত্তিক সচেতনতা মূলক সভা সমাবেশ করার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।