বিবর্তন ডেক্সঃ
কুমিল্লা মহানগরীর সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দির পাহারা দিচ্ছেন বি এন পি, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। মহানগরীর মন্দিরগুলোতে শুক্রবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে সারা রাত পাহারায় ছিলেন তারা।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় তাদের বসতবাড়ী, উপাসনালয় পাহাড়া দিচ্ছেন পালাক্রমে বিএন পি, যুব ও ছাত্রদল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সহ শিবিরের নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদল সভাপতি ফখরুল ইসলাম মিঠুর নেতৃত্বে দলবেঁধে ঘুরে ঘুরে নগরীর শতাধিক মন্দির,সংখ্যালঘুদের বাড়ীঘর এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহাড়া দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।চলমান সংকটে নাসকতা প্রতিরোধে এ কর্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মিঠু।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের নায়েবে এদিকে আমির মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে সারা দেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দেওয়া হচ্ছে। আমি নেতাকর্মীদের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছি। তাদের মনে সাহস দিতে বলেছি। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশে জামায়াত রয়েছে। জামায়াত মনে করে, সংখ্যালঘু বলে দেশে কিছু নেই, সবাই দেশের নাগরিক। নগরীর প্রায় সব মন্দির পরিদর্শন করেছি।
এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাআলা সহ একদল শিক্ষার্থী গত কাল সন্ধ্যায় কুমিল্লা জিলাস্কুলের সীমানা দেয়ালে “ছত্রিশে জুলাই—” শিরোনামে একটি লেখচিত্র অংকন করছিলেন। সেই অবস্থায় তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জান্নাতুল বলেন, আমি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের গোড়া থেকেই ছিলাম। আমরা স্বাধীনতা দেখিনি। এ “ছত্রিশে জুলাই” এ দিনটি আমাদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে নিচ্ছি। আর তাই এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই আমাদের এ দেয়াল লিখন কর্মসূচী। এ কাজ সারা কুমিল্লায় হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী কুমিল্লা কালেক্টরি স্কুল এন্ড কলেজের এইচ এস সি পরীক্ষার্থী তানহা বলেন, সড়কে ট্রাফিকের কাজ করছি। জয়ের আনন্দে লেখা পড়ার কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে জেনেও কাজ করছি ভাল লাগছে। আমরা পারি না এমন কাজ নেই। সবে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।
এদিকে গত কাল বিকেলে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধখৃষ্টান ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রদক্ষিন করে নগরীর কতিপয় মন্দির পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। প্রায় ২ শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাত্র- যুবক এতে অংশ গ্রহন করে।মিছিল শেষে এক বক্তব্যে জেলা ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস বকসী বলেন, মনে হচ্ছে কুমিল্লায় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে সেনাবাহিনীর সাথে কাজ করছে সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিকদলের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরেই আজকের এ মুহূর্ত। যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে আমাদের ভাইয়েরা এত রক্ত দিয়েছে সে নতুন বাংলাদেশে যেন বৈষম্যটা না থাকে। এখনো কুমিল্লার কোনো মন্দিরে হামলার খবর পাইনি। শুনেছি বি এন পি সহ জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী মন্দির পাহাড়া দিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ । এটা আমাদের অনুকরণীয় ও শিক্ষণীয়। তবে আমরা কিছুটা শংকিত। গ্রামে গঞ্জের বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দুরা বরাবরের মতই আতঙ্কে রয়েছে। কোন কোন স্থানে আক্রান্তও হয়েছে এ খবর ও আমাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, প্রকৃতঅর্থে পুলিশ বিভাগ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় অবস্থান বিহীন দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে দেশের অবস্থা ভালোর দিকে যেতে আর কত সময় নিতে হবে জানিনা। আশা প্রত্যাশা করবো মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ বিভাগ তাঁদের কার্যক্রম শুরু করবে।
এদিকে প্রায় সপ্তাহ ধরে নগরীর যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচল সহ যানজট নিরসনে দিনরাত নিজেদের শ্রম দিয়ে চলেছে শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লা নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও বিভিন্ন গলির মুখে স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিফর্মধারী বি এন সি, সি সদস্য এবং সাধারণ ছাত্র- ছাত্রীরা নিজেদের সমন্বয়ের মাধ্যমে পালাক্রমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাফিক মেইনটেনেন্সের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে নগরীর জিলা স্কুল সামনের সড়কের যানজট নিরসনের দায়িত্বে থাকা কুমিল্লা সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইরফান উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে পুরো শহরেযানবাহন সহ যাত্রীদের নিরাপদ চলাচলে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। হোন্ডারোহীদের যাদের হেলমেট ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছি, যানবাহনের নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করতে নির্দেশ করছি। কোন কোন ক্ষেত্রে চালকদের ড্রাইভিংলাইসেন্স দেখছি, অনেকে আমাদের উপেক্ষাকরে পাশকাটিয়ে চলে যায়। যদি কেউ আমাদের নির্দেশিত কোন অনিয়ম পাই তাদের আমরা ক্ষেত্র বিশেষে ৫ থেকে ১০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখি।সারা শহরে আমরা তিনশ এর কমবেশি এ ট্রাফিক মেইনটেনেন্সের দায়িত্ব পালন করছি।
এদিকে সম্প্রতি কুমিল্লা জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে এ মতবিনিময় করা হয়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, মহানগর জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এয়ার আহম্মেদ সেলিম, কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক ফারুকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, আমি অবাক হই যখন শুনি বা দেখি যে সনাতন ধর্মাবলম্বী সহ দেশের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মন্দির পাহাড়া দিচ্ছে রাজনৈতিক নেতাকর্মী কিন্তু কেন? তারা কি এ দেশের
নাগরিক নয়, এ দেশে পূর্ণ অধিকারে বসবাসের তাদের অধিকার নেই নাকি? তিনি বলেন, তারা এ দেশের নাগরিক পরম্পরায় তাঁদের পৈতৃক পুরুষের নিজ ভিটায় থেকে তাঁরা ভিটা ছাড়ার আতঙ্কে থাকতে পারে না। সরকারের উচিত অগ্নি সংযোগ ভাঙচুরের দলে যে বা যারা থাকবে তাদের চিন্হিত করে আমার দলের বা বাইরের যে কেও হোক সকলেই সমানভাবে আইনগত শাস্তির আনতে হবে। এসভায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এ সময় বক্তারা হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত সকলকে আটক করে আইনের আওতায় আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার জানান।