সৌরভ লোধ ||
গত দুইদিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারতীয় ঢলের কারণে কুমিল্লায় গোমতী নদীতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর টানা বৃষ্টিতে কুমিল্লায় দুইদিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার তিনজন ও সোমবার একজন মারা গেছেন।
নিহতদের মধ্যে দুইজন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে, একজনের মাথায় গাছ পড়ে এবং একজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে বন্যার পানিতে ডুবে কেরামত আলী নামে একজন মারা যান। তিনি নাঙ্গলকোট উপজেলার দাউদপুর এলাকার বাসিন্দা। কেরামত আলীর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেব দাস।
তার আগে বিকেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সে নগরীর ছোটরা এলাকার বাসিন্দা। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক যোবায়ের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তারর আগে সকালে জেলার চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় মাথায় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন নামে ৩৪ বছর বয়সী এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে।
এর আগে সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সোহরাব হোসেন সোহাগ নামে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে গেলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
পাশাপাশি কুমিল্লার দক্ষিণ অঞ্চলের যেই ৩টি উপজেলা নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম এবং মনোহরগঞ্জ এলাকায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তাদের কাছে এখনও কোনো সরকারি সহায়তা পৌঁছায় নি।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে গোমতী নদীর যে পানি রয়েছে সেটি বিপৎসীমার ১.০৪ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই পাড়ের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে গোমতীর পাড় ভেঙে লোকালয় বা জনপদ প্লাবিত হয়ে যেতে পারে।
এই ঘটনার জন্য স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাদের এখন দ্রুত উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি,নিরাপ আশ্রয়, খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ, পানিবাহিত রোগসমূহ থেকে মুক্ত করার জন্য ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী খুব দ্রুত দরকার।
আমরা কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা: নাছিমা আক্তার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ১৭টি টীম এই মুহূর্তে প্রস্তুত রয়েছে, পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিক্যাল টীম গঠন করা হয়েছে। বন্যার ভয়াবহতা তিনটি উপজেলা ছাড়াও জেলার যে যে নিম্নাঞ্চল রয়েছে – দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা ও তিতাস, সেই জায়গাগুলোতে উদ্ধার তৎপরতা এবং পর্যাপ্ত খাবার সেলাইন সহ চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে, দূর্গম এলাকায় খাবার সেলাইন সহ চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্লাবনের ভয়াবহতায় ৪ জনের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে বন্যার যে ভয়াবহতা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয় বলেও জানান। তিনি বলেন, মৃতদেহ হাসপাতালে না আসলে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কোন তিনি গত কাল জেলার লাকসাম উপজেলায় একটি শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
বিকেলে কুমিল্লা গোমতী বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জগন্নাথপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান সহ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করেছেন। প্রতিরক্ষাবাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনকরেন এবং দূর্গতদের সহযোগীতা সম্পর্কে নির্দেশনা দেন।
এদিকে কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ভাসমান জনগোষ্টি ও আশ্রয়কেন্দ্রে স্মরণার্থীদের মাঝে শুকনা খাবার ও জরুরি সামগ্রী বিতরণ করে যুব রেড ক্রিসেন্ট এর একটি দল। সেই সাথে সংরাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্মরণার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
অন্যদিকে এ সময়ে গোমতীর বাঁধের আশংকা এড়াতে এলাকাবাসী, নিজেদের বাড়ী থেকে সংগৃহীত টিন, বাঁশ, বালিভর্তিবস্তা সহ স্থানীয় উপায়ে ব্যবস্থা নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কে গাড়ী চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা রিজিওনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার । তিনি জানান, ফেনী লালপুল এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার জুড়ে সড়কে পানি রয়েছে। এছাড়া ফেনী জেলার ফাজিলপুর থানা এলাকার কিছু অংশে সড়কে পানির প্রবাহ রয়েছে ।