Oplus_131072
সৌরভ লোধ ||
জন্ম থেকেই চোখে আলো নেই, তবু জীবনের আলো খুঁজে পেয়েছেন নিজের ঘামে আর পরিশ্রমে। বলছি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের হেরপেতি গ্রামের কমল দাশের কথা।
কমল দাশ জন্মগতভাবে অন্ধ। কিন্তু ভাগ্যকে দোষ না দিয়ে বেছে নিয়েছেন কঠোর পরিশ্রমের জীবন। প্রতিদিন ভোরে হাতড়ে হাতড়ে বেরিয়ে পড়েন পথে—কাঁধে বাদাম ও আমড়ায় ভরা ব্যাগ। এই নিয়েই তাঁর জীবনযুদ্ধ, সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন।
চারজনের সংসার তাঁর, স্ত্রী ও দুই সন্তান। বড় ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোটটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে। সংসারের ভরণপোষণ চলে বাদাম-আমড়া বিক্রির টাকায়। স্ত্রী মাঝে মাঝে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কিছু টাকা উপার্জন করেন, কিন্তু তাতে কষ্ট কিছুই কমে না।

দিনভর রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পথে পথে বাদাম বিক্রি করেন কমল দাশ।বিকালে যখন বড় ছেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে, তখন সে বাবার পাশে দাঁড়ায়।এর আগে ছোট ছেলে বাবাকে নিয়ে বের হয় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়। স্কুল বন্ধের দিন একসাথে বের হয় দুই ছেলেকে নিয়ে পথে পথেবিক্রি করতে বাদাম, আর গড়তে জীবনের স্বপ্ন।
বাদাম বিক্রি করা অবস্থায় কমল দাশ আমাদের জানান,চোখে আলো নাই, কিন্তু মনে আশা আছে। আমি চাই আমার ছেলেরা মানুষ হোক, লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াক। ভিক্ষা করবো না—পরিশ্রম করেই খেতে চাই।
তিনি আরো জানান, কখনো ১০ কেজি, কখনো ২০ কেজি বাদাম কিনে বিক্রি করেন। টাকার অভাবে মাঝে মাঝে ধার নিয়েও পণ্য কিনতে হয়। সোনাইমুড়ি,আড্ডা, জলম ও রহিমানগর বাজারে তিনি নিয়মিত বাদাম বিক্রি করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন,আমরা ছোটবেলা থেকেই কমল দা’কে দেখি। তিনি কখনো কারো কাছে হাত পাতেন না। বাদাম বা আমড়া কিনে বাজারে বিক্রি করেন। চোখে না দেখলেও তাঁর পরিশ্রম দেখলে মন ভরে যায়।
আরেকজন স্থানীয় রাকিব হোসেন বলেন,তাঁকে প্রায়ই আড্ডা ও বেওলাইন বাজারে বাদাম বিক্রি করতে দেখি। তাঁর পুঁজিটা কম। কেউ যদি একটু সাহায্য করে, তাহলে হয়তো তাঁর সংসারটা একটু স্বচ্ছলভাবে চলতে পারে।
এই বিষয়ে আদ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান লিমন বলেন,কমল দাশ একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষ। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁর জন্য যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হচ্ছে। চাল কার্ড ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থাও করেছি।
