সৌরভ লোধ ||
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় এবার সন্ধান মিলেছে প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এক বটগাছের। সময়ের প্রভাবে ক্ষয়ে যাওয়া বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা বিলীন হলেও, প্রকৃতির সঙ্গেই যেন অটুট বন্ধনে দাঁড়িয়ে আছে এই বটবৃক্ষ। উপজেলার দক্ষিন শীলমুড়ি ইউনিয়নের শিয়ালোড়া গ্রামে অবস্থিত বিশাল এই গাছটি এখন স্থানীয় মানুষের কাছে রহস্য, কৌতূহল ও বিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দু।
শতসহস্র ডালপালা আর ঘন পাতার বেষ্টনিতে দাঁড়িয়ে থাকা এই বটগাছকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য লোককথা, উপকথা ও অলৌকিক ঘটনার গল্প। গাছটির সঠিক বয়স ও রোপণের ইতিহাস নিয়ে নিশ্চিত তথ্য না থাকলেও স্থানীয়দের ধারণা, এর বয়স কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৫০০ বছরেরও বেশি।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, একসময় এই অঞ্চল ছিল সম্পূর্ণ জনবসতিহীন, চারপাশজুড়ে ঝোপ-ঝাড় আর বন্য জন্তু-জানোয়ারের বিচরণস্থল। গাছটির বিশাল শেকড় আর ডালপালা দেখে অনেকেই মনে করেন, এ যেন গ্রামের নীরব পাহারাদার।
গাছটির সঙ্গে রয়েছে অলৌকিক ও ভৌতিক গল্পের দীর্ঘ ইতিহাস। ঘোষ্পা গ্রামের রিকশাচালক বিল্লাল মিয়া বলেন,অনেক বছর আগে রাতের বেলায় এই গাছের পাশ দিয়ে ঝুমুর ঝুমুর শব্দে ঘোড়া যাওয়ার শব্দ শোনা যেতো। ভয়েও কেউ গাছের কাছে আসতে পারত না। পাতাগুলাও কখনোই শুকায় না, ডালপালাও সবসময় সতেজ থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা মামুন হোসেন বলেন,অনেকেই বলে এই গাছের নিচে বড় বড় জ্বীন থাকত। আশেপাশে ছিল অসংখ্য সাপ আর শিয়াল। কেউ গাছের ডাল কাটলে বা পাতা ছিঁড়লে নাকি অমানুষিক ঘটনা ঘটত। এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল জায়গাটা যে দিনের বেলাতেও কেউ আসতে চাইত না।
তিনি আরও বলেন,শুনেছি কেউ একবার এখানে স্বর্ণের নাঙ্গল পেয়েছিল। আবার শুনেছি, একজন গাছের ডাল কাটার পর নাকি পাগল হয়ে যায়। কেউ নিশ্চিত না, সবই শুনা কথা। তবে এসব গল্প নিয়ে কেউ ডকুমেন্টারি করলে চমৎকার হতো।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, কেউ এই গাছের পাতা ছিঁড়লে নাকি ‘ব্রেনলেস’ হয়ে যায়! যদিও এসব দাবি কুসংস্কার নাকি বাস্তব এ বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত তথ্য পাওয়া যায়নি। গ্রামবাসীর দাবি,এ গাছটি আমাদের ঐতিহ্য। শুধু বিশ্বাস বা অলৌকিক গল্প নয়, এটি প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য। সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর ইতিহাস আর সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হবে।এই বটগাছ এখন শুধু একটি গাছ নয়,বরং বরুড়ার এক জীবন্ত ইতিহাস।
