সৌরভ লোধ ||
অনেকের চোখে অবহেলিত এক জলজ উদ্ভিদ হোগলা পাতা। কিন্তু সেই হোগলা পাতাকেই পুঁজি করে জীবনের চাকা সচল রেখেছেন কুমিল্লার বরুড়ার মধ্য লক্ষীপুর গ্রামের কৃষক পরিমল সরকার। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে টিকে থাকা এই পেশাকে আজও জীবিকার প্রধান উৎস হিসেবে ধরে রেখেছেন তিনি।
৬০ বছর বয়সী পরিমল সরকারের পরিবারের সদস্য তিনজন,স্ত্রী ও কলেজপড়ুয়া এক ছেলে। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে হোগলা পাতা কাটতে ও বেঁধে চাষের কৌশল শিখেছেন। বয়স যখন মাত্র দশ বছর, তখন থেকেই তিনি বাবার পাশে দাঁড়িয়ে এই পেশায় জড়িয়ে পড়েন। তার বাবা ও দাদুরাও ছিলেন হোগলা পাতার চাষি। সেই উত্তরাধিকার বহন করে আজও একই পরিশ্রমে মাঠে ঘাম ঝরান পরিমল।
মাত্র ১৬ শতক জমিতে হোগলা পাতা চাষ করেই তিনি চালিয়ে যান বছর জুড়ে সংসার। পরিমল সরকার বলেন, হোগলা পাতা একবার রোপণ করলেই প্রতি বছর কাটা যায়। মাঘ-ফাল্গুন মাসে রোপণ করি, সারগোবর দেই, দুইবার আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। অগ্রহায়ণ–পৌষ মাসে পাতা কাটার সময় আসে।
প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচে হোগলা চাষ করে ৪৫ হাজার টাকার মতো আয় করা হয়।এক একটা হোগলা পাতার গড় দৈর্ঘ্য চার ফুট, যা দিয়ে তৈরি হয় দাড়ি বিছানা (চাটাই)। জ্যৈষ্ঠ মাসে মাঠের কাজ কমে গেলে তিনি বসে এসব বিছানা তৈরি করেন পরিবার নিয়ে। আকারভেদে প্রতিটি বিছানার পাইকারি দাম পড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
তবে লাভ কমে গেলেও এই চাষে কখনো লোকসান হয়নি বলে জানান পরিমল। তার ভাষায়, এই চাষে লাভ কম হলেও লস নাই কখনো। কৃষি অফিস থেকে যদি সহযোগিতা পেতাম তবে আরও ভালো হতো। কিন্তু আমরা কোনোদিন তাদের কাছ থেকে সহায়তা পাইনি। কারা দায়িত্বে আছেন ইউনিয়নে, তাও জানি না।
অন্যদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে ভিন্ন মত দেন। তিনি বলেন, এখন আর হোগলা পাতায় আগের মতো লাভ পাওয়া যায় না। অনেক কৃষকই এই চাষে আসতে চায় না। আমরা তাদের বেশি লাভজনক ফসলের দিকে উৎসাহিত করছি।
তিনি আরও জানান, আগে বরুড়ার শাকপুর, জলম, খোশবাসসহ কয়েকটি এলাকাজুড়ে হোগলা পাতা চাষ ব্যাপকভাবে দেখা যেত। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় শাকপুর ইউনিয়নে।শুনেছি কিছু হোগলা পাতা মধ্যপ্রাচ্যেও রপ্তানি হয়। তবে দেশে বিশেষ করে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে এর চাহিদা বেশি। দক্ষ জনবলের অভাব, বিকল্প উপকরণের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং কৃষিজমিতে শাক–সবজির চাষ বাড়ায় হোগলা চাষ কমে গেছে। আগে প্রায় তিন হেক্টরে চাষ হতো, এখন তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
