কুমিল্লার গ্রামাঞ্চলে
উর্বর কৃষি জমি ক্ষতির জন্য ড্রেজার একটি আতংক।
কুমিল্লা ব্যুরো: কুমিল্লার মুরাদনগ, বরুড়া, দাউদকান্দি সহ কয়েকটি উপজেলায় অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে বিলীন হচ্ছে এলাকার তিন ফসলী উর্ব্বর কৃষিজমি। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকগণ ড্রেজার ব্যবসায়ি চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
জানা যায়, বরুড়া উপজেলার গালিমপুর, ভাউকসার ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকার ভূমি খেকো মাটি ব্যবসায়ীদের ড্রেজার একটি রমরমা ব্যবসার মাধ্যম । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এলাকার প্রভাবশালীরা এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন। দেখা গেছে, কয়েক একর ফসলী জমির মাঝে একটি লিজ বা খাস জমি রয়েছে সেটিকে নিজের বাগে এনে খনন করে মাটির বিক্রির জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে ড্রেজার ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীরে থেকে মাটি উত্তোলন করে। এতে বিস্তৃত জায়গা জুড়ে বিশাল গর্ত তৈরী হয়। এতে পার্শ্ববর্তী ফসলী জমির আইল বা জমির পাশ ২/১ বছরের মাথায় ভেঙ্গে তলিয়ে যায়। যে ঘটনাটি ঘটেছে এ উপজেলার গালিমপুর গ্রামে। প্রশাসন কখনো খুব কঠিন হয়েছে আবার কখনো বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। বরুড়া গালিমপুরের কৃষক জয়নাল আবেদিন এবিষয়ে খুব দুঃখের সাথে জানান যে, এ ড্রেজার ব্যবহার করে মাটি বিক্রির ব্যবসায় স্থানীয় গনপ্রতিনিধি জড়িত থাকেন বা আছেন। প্রশাসনের কিই বা করার থাকে। তবে এটির বিরুদ্ধে একটি আইন রয়েছে সম্ভবত এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছেনা।তবে এটা বলা যায়
এর জন্য আশপাশের ফসলীজমির ভবিষ্যৎ দূর্বিসহ হবে।
এদিকে দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটার কৃষক স্বপন কুমার জানান, গত কয়েক বছর আগে থেকে আমার জমির পাশে এহেন কর্মযজ্ঞটি চলছিল। যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে।৷ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে যে কোন লাভ হবেনা ভেবে একরকম নীরবে ক্ষতি মনে নিয়েছি। এ এলাকায় অনেক ভূক্তভোগী রয়েছেন।
মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের কোন না কোন স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন চালাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিখেকো চক্র। অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারনে ৫০/৬০ ফুট গভীর থেকে মাটি ও বালি উত্তোলনের ফলে আশ-পাশের তিন ফসলের জমিগুলো কূপে পরিনত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমান ২৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর। এর মধ্যে বেশীর ভাগই দুই থেকে তিন ফসলী জমি। অথচ পুকুর ও ডোবা করার কারণে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অনাবাদি রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবেল খান পাপ্পু বলেন, ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে মাটি কাটার অবস্থা দেখে আমি উদ্ধিগ্ন ও আতংকিত। কেননা তিন ফসলি জমির টপসয়েল্ট (উর্বর মাটির উপরের অংশ) ব্যাপক হারে কেটে নেওয়া হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে চাষাবাদের জন্য জমি পাওয়া যাবে না। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কৃষি জমির মাটি কেটে অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
উপজেলার মুগসাইর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে ড্রেজার ব্যবসায়ি সোহেল খান বলেন, ‘আমরা উপজেলা ভূমি অফিস, থানা পুলিশ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও কতিপয় সাংবাদিক ম্যানেজ করেই ড্রেজার চালাই।’
ধামঘর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার বলেন, আমরা সবসময় ড্রেজারের বিপক্ষে। ড্রেজার ব্যবসায়িদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রমান করতে পারলে চাকুরি ছেড়ে দেব।
মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়িদের কাছ থেকে পুলিশের টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ড্রেজার মালিকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন সুলতানা নিপা বলেন, ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। নির্বাচনের এ সময়েও অবৈধ ড্রেজার বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভূমি অফিসের নামে কেউ ড্রেজার ব্যবসায়িদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রমান পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ শিকদার বলেন, ‘আমি যোগদানের পর বুঝতে পেরেছি এ উপজেলার কিছু মানুষের ড্রেজারপ্রীতি রয়েছে। ড্রেজারমুক্ত করার জন্য নিয়মিত অভিযান চলছে। ড্রেজার ব্যবসায়িদের দৌড় শুরু হয়ে গেছে।’