কুমিল্লা ব্যুরো: রাত পোহালেই সূর্যোদয়ের পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সাংবিধানিক বিধি অণুসারে দীর্ঘ ৫ বছর পর কাল ৭ জানুয়ারী কুমিল্লা সহ গনতান্ত্রিক অধিকারে ভোট দান করবেন সারাদেশের মানুষ।
এ নির্বাচনটিতে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর প্রভাবশালী প্রার্থীরা ভোটারদের ভোট প্রার্থনায় না না কৌশলে দিনরাত প্রচার- প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তবে এ নির্বাচনে কুমিল্লার সবকয়টি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এর মধ্যে জেলার ১১টি আসনের অন্তত ৬ টিতে আওয়ামী লীগের নৌকার সঙ্গে দলের পদ-পদবিধারী বিভিন্ন প্রতীকের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথা বলছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এসব আসনের মধ্যে রয়েছে- কুমিল্লা-১, ২, ৩, ৪, ৬, ও ১১। এছাড়া কুমিল্লা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থীর অবস্থান তেমন নেই, তবে এখানে লড়াই হবে দলের স্বতন্ত্র বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে। কুমিল্লা-৬, ৮, ৯ ও ১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় এসব আসনে লড়াই তেমন জমে না উঠলেও প্রার্থীদের স্বস্ব বিজয়ের জায়গাটুকু ধরে রাখতে কার্পন্য নেই । এসব আসনে নৌকার জয় তুলনামূলক অনেকটা এগিয়ে আছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভোটের মাঠের হিসাব-নিকাশ, গোয়েন্দা তথ্য ও নানান শ্রেণিপেশার মানুষের মতামত অনুযায়ী সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জেলার ১১টি আসনের মধ্যে যে ৬টি আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াইয়ের আভাস মিলেছে সেগুলো
হচ্ছে-
কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) : এ আসনটিতে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর। এখানকার সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও তার ছেলে দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপরীতে ঈগল প্রতীকের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসানের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় এখানে এ দু’প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এছাড়া এ আসনে ভোটের মাছে আরো ছয় প্রার্থী রয়েছেন।
কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) : এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি সেলিমা আহমাদ মেরী। এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারী স্বতন্ত্রের দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর সাথে নৌকার ত্রিমুখী লড়াই হবে। অপর দুই প্রার্থী হলেন- মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শফিকুল আলম। তিনি ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এছাড়া আছেন হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ। তিনি ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন। ভোটের সমীকরণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ওই স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর কাস্টিং ভোট দলের প্রার্থীর জয়ের বিষয়টি ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। এ আসনে আরো ৬ জন প্রার্থী রয়েছে।
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর-বাঙ্গরা বাজার) : এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। এখানে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে
লড়ছেন। দলে দীর্ঘ দিনের ত্যাগী ও পোড়খাওয়া এ নেতার পক্ষে এ আসনে নির্বাচনি মাঠ এরইমধ্যে সরগরম হয়ে উঠে। এছাড়াও এ আসনে আরো ৮ প্রার্থী রয়েছেন । কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) : এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। এখানে তার সঙ্গে লড়ছেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এ আসনে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে এ আসনের অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যানসহ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পক্ষে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তার পক্ষে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন রাজু ও তার পক্ষের নেতাকর্মীরা। এতে সরগরম হয়ে উঠেছে ওই নির্বাচনি এলাকা। এছাড়াও আসনটিতে বিভিন্ন দলের আরো ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন।
কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সদর দক্ষিণের আংশিক) : এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী টানা তিনবারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা, অনুসারী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন, দলের তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠন ও করোনা মোকাবিলাসহ তিনি এ সংসদীয় আসন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এছাড়াও কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে দেশে-বিদেশে জনমত সৃষ্টিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনরাত প্রতিটি এলাকায় উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহানগর আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তার রয়েছে কমিটি। সবমিলিয়ে তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা সরগরম। এদিকে নৌকা প্রতীক না পেয়ে ঈগল মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন স্থানীয় ১৪ দলের সাবেক সমন্বয়ক, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা কুমিল্লার বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত অ্যাডভোকেট আফজাল খান কন্যা যিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনিও আসনব্যাপী দিন-রাত প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী। শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীকের আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও ঈগল প্রতীকের আঞ্জুম সুলতানা সীমার মধ্যে ভোটের লড়াই হবে বলে স্থানী- রা জানিয়েছেন। এ আসনে আরো দুইজন প্রার্থীও রয়েছেন।
এদিকে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান এমপি ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। দলের মনোনয়ন না পেয়ে এ আসন থেকে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও এ আসনের ৫ বারের এমপি অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের ছেলে চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু। এ দুই প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে এরইমধ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত এ আসনটিতে ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও মুনতাকিম আশরাফ টিটুর মধ্যে নৌকার দৌড়ে জোড় বেশী বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।