বিবর্তন রিপোর্ট :
কুমিল্লার হোমনায় প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ফয়সল (২২) কে প্রথমে শ্বাসরোধ পরে জবাই করে হত্যার দায়ে মোঃ শামীম মিয়া ও দুলাল মিয়া দুই যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত।
১লা এপ্রিল (সোমবার) সকাল সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুমিল্লা হোমনা উপজেলার রাজনগর গ্রামের মোঃ ফুল মিঞার ছেলে মোঃ শামীম মিয়া (২৪) ও একই উপজেলার সাফলেজি গ্রামের মোঃ বেদন মিয়ার ছেলে মোঃ দুলাল মিয়া প্রকাশ দুলাল (২০)।
মামলার বিবরণে জানাযায়- হত্যাকাণ্ডের শিকার ফয়সল এর সাথে আসামি মোঃ শামীম মিয়ার কলেজ ছাত্রী বোন মেহেদী আক্তার (১৮) এর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পারষ্পরিক যোগসাজশে ২০২০ সালের ৫ জুন ফয়সল তার মামা নজরুল মিয়ার ছাদে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় তাঁর মোবাইলে আসামি শামীম ফোন করে আমিরুল ইসলাম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ে যেতে বলে।
তখন ফয়সাল কাউকে কিছু না বলে শামীরের কথামতো মামা বাড়ীর ছাদ থেকে বের হয়ে বাড়ীতে ফিরে না আসায় স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করে না পেয়ে নিহতের বৃদ্ধ পিতা মোঃ মকবুল হোসেন হোমনা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মোবাইল ট্রেকিং এর মাধ্যমে প্রথমে আসামি মোঃ শামীম মিয়াকে গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছে শামীম জানায়, সে প্রথমে ফয়সলের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং পরে ধারালো ছুরিকাঘাতে জবাই করে তাকে হত্যা করে লাশটি বিদ্যালয়ের মাঠে মাটিতে পুঁতে রাখে।।
এ বিষয়ে ২০২০ সালের ১৩ জুন নিহত ফয়সলের বড় বোন হোমনা থানাধীন রাজনগর গ্রামের হারুন মিয়ার স্ত্রী সালমা আক্তার বাদী হয়ে মোঃ শামীম মিয়াসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে হোমনা থানায় মামলা দায়ের করর।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ শামীম সরকার মোবাইল ট্রেকিং এর মাধ্যমে আসামি মোঃ শামীম মিয়া ও মোঃ দুলাল মিয়াকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করলে তারা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এরপর শামীমের কথানুযায়ী ২০২০ সালের ৫ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভিকটিম ফয়সলকে প্রথমে শ্বাসরোধ পরে জবাই করে হত্যা করে লাশ মাটির নিচে পুঁতে রাখে। ঘটনার ১২দিন পর গ্রেফতারকৃত আসামি শামীম এর দেখানো মতে ভিকটিম ফয়সলের অর্ধ গলিত মরদেহ আমিরুল ইসলাম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠের মাটির নিচ থেকে হোমনা থানাপুলিশ উদ্ধার করে সূরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। তৎপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ শামীম সরকার আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০২১ সালের ১৮ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর মামলাটি বিচারে আসলে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় চার্জগঠন করে রাষ্ট্র পক্ষে ১০জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আসামিদ্বয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে আসামি মোঃ শামীম মিয়া ও মোঃ দুলাল মিয়া’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড এবং একই সাথে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন আদালত।
রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোঃ শামীম মিয়া ও মোঃ দুলাল মিয়া আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী অতিঃ পিপি এডভোকেট শেখ মাসুদ ইকবাল মজুমদার ও মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন- আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন।
অপরদিকে, আসামি পক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী এডভোকেট বিমল কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন- এ রায়ে আসামিপক্ষ অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ। রায়ের কপি হাতে পেলে শীঘ্রই উচ্চ আদালতে আপীল করবো।