বিবর্তন রিপোর্ট:
১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় বরুড়া শহিদ স্মৃতি সরকারি কলেজ মাঠে সপ্তাহ ব্যাপী প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও পশু-পাখি প্রদর্শনীর আয়োজন করে উপজেলা প্রানিসম্পদ কার্যালয়। দেশব্যাপী প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর জেলা- উপজেলা পর্যায়ে সপ্তাহব্যাপী ( ১৮-২২ এপ্রিল) এ পশু-পাখি প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
বরুড়া উপজেলায় প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের আয়োজনের প্রথমদিনে প্রদর্শনী মেলার স্টলে দেখা যায় খাঁচায় বন্দি অবস্থায় শালিক,বালিহাস,ডাহুক জাতীয় কতিপয় বন্যপাখি।
বনের পাখি খাঁচায় বন্দী করে প্রদর্শনী করানোর বিষয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বরুড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নাসরিন সুলতানা তনু কালবেলাকে বলেন, এইগুলা সব পোষা পাখি,এগুলা ওনি পালন করে। সব উপজেলাতেই শৌখিন পাখি প্রদর্শনী হচ্ছে। এগুলা কেউ বন থেকে ধরে আমাদের স্টলে আনে নাই।
সরেজমিনে দেখা যায়, একটি স্টলে বিভিন্ন পাখি প্রদর্শনীর জন্য বসেছেন কে আই টেকনিশিয়ান লাইভ স্টক মোশাররফ হোসেন রাসেদ। এই স্টলে শালিক, ডাহুক ও বালিহাঁস খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। অন্য আরেকটি স্টলেও এমন কিছু পাখি খাঁচায় বন্দী দেখা যায়।
শালিক, ডাহুক ও বালিহাঁস খাঁচায় বন্দী করে আনা ব্যক্তির বাড়ি বরুড়া উপজেলা দক্ষিণ শীলমুড়ি ইউনিয়নের সুন্দুরদোল গ্রামের শাহ আলম মিয়া। তিনি বলেন, আমি দুই বছর ধরে এই পাখিগুলো পালন করছি। আমাদেরকে এখানে ইনভাইট করেছে পাখিগুলো নিয়ে আনার জন্য। আনলে খরচ দিবে। আমি এনেছি, এখনও খাম দেয়নি, দিবে।
মোশাররফ হোসেন রাশেদ বলেন, ‘অফিস থেকে পাখি প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছিল। আমরা ঐ নির্দেশে এনেছি। কি কি পাখি আছে তা প্রদর্শন করার জন্য এনেছি। গত বছরও আনা হয়েছে। তাই সাধ্যমতো প্রদর্শন করেছি।
দিনব্যাপী প্রদর্শনীর কথা থাকলেও দিনের দুপুর ১ টায় সব গুটিয়ে ফেলা হয়। অনুষ্ঠান হবে এমন খবর জানে না বলে অভিযোগ করেছে অনেক বড় খামারি।
ফাতেমা নামের একজন খামারি বলেন, আমার বাড়ি পুরানপুর। আমি ৮/১০ বছর ধরে হাস,মুরগী ছাগল,গরু পালন করি। প্রাণিসম্পদে ঔষধের জন্য আসলে তারা দুর্ব্যবহার করে,আমি আইডি কার্ড জমা দিয়েছি অফিসে।কিন্তু কোন অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয়না।
এদিকে প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে দর্শকদের উপস্থিতিও তেমন চোখে পড়েনি। স্টলের মধ্যে পশুপাখি কিছু থাকলেও মানুষ শূন্য ছিলো একেবারে।
এই বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, আমি যতটুকু জানি, বন্যপ্রাণী অনুমতি ছাড়া পালন করা যায় না। অনুমতি ছাড়া পালন করা দন্ডনীয় অপরাধ। বন্যপ্রাণী বিষয়টি বন বিভাগের দায়িত্ব। আমরা বন্যপ্রাণী নিয়ে উৎসাহিত করি না। আমরা বন্যপ্রাণী নিয়ে নয়, আমরা মূলত গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে মেলা করি। যেমন- লাভ বার্ড, কবুতর, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মোঃ ছানাউল্যা পাটওয়ারী বলেন, বন্যপ্রাণী কখনোই খাঁচায় ডুকানো যাবে না, সেটি অপরাধ। ডাহুক, শালিক ও টিয়া, কখনও সৌখিন পাখি হতে পারে না।এইগুলো প্রাণীসম্পদের প্রাণী না, প্রাণী সম্পদের প্রাণী হলো হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও কুকুর-বিড়াল। বন্যপ্রাণী ধরা, মারা, খাওয়া, ক্রয়-বিক্রয়, পাচার, দখলে রাখা বা শিকার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বন্যপ্রাণী দেশের সম্পদ, জীবন, জীবিকা ও পবিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ছবি দেন, আমরা তাদের সাথে কথা বলবো।