বিবর্তন রিপোর্টঃ
দেশব্যাপী শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে সদ্য সমাপ্ত একটি সংগীত প্রতিযোগিতার বিচারক নিয়োগসহ বিচারকার্যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া সহ কুমিল্লার বিভিন্ন পর্যায়ের সংস্কৃতজনদের মধ্যে।
সম্প্রতি কুমিল্লার বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ সহ সংগীতশিল্পী, অভিভাবকদের সদ্য সমাপ্ত এ সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা সমালোচনা নজরে পড়েছে কুমিল্লা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সুধীজনদের। বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা – সমালোচনা সোশ্যাল মিডিয়ায়ও রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিযোগিতানুষ্ঠানে বিচারকার্য শেষে কুমিল্লার বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী গুরুদাস ভট্টাচার্য তাঁর পেইজ বুক আইডিতে মন্তব্য করেন,
‘ভবিষ্যতে এধরণের অসম বিচারকার্যথেকে বিরত থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছি। প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনে শিষ্টাচার নেই বললেই চলে। বিচার কার্যে নিয়োজিত হবার আগে নিজেদের বিশেষ বিষয়ে আরো একটু দক্ষতা অর্জনে সচেতন হওয়া উচিত’। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে বিচারকার্য শেষে নম্বর ফর্দের ছবি তুলে রাখারও প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
প্রতিযোগীদের অংশগ্রহনের বিভাগ নিয়ে ব্যত্যয় তুলে ধরে তিনি বলেন,শ্রেণি ও বয়স ভেদে বিভাজিত ক, খ, গ তিনটি বিভাগের ক বিভাগে নার্সারী থেকে ৫ ম শ্রেণী পর্যন্ত রাখা হয়েছে। একজন ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সাথে নার্সারী শ্রেণীর প্রতিযোগীরা পেরে উঠার কথা নয়।
প্রতিযোগীর এক অভিভাবক অধ্যাপক বীনা বর্মণ বলেন, বিচার কার্যে অনেক অযোগ্য ব্যাক্তিকে বসানো হয়েছে। বিচারকার্যের ফলাফলের চূড়ান্ত শীট তৈরির সময় কতৃপক্ষের সামনে প্রতিযোগীর প্রভাবশালী অভিভাবককে বসে থাকতে দেখা গেছে। সামনে কোন প্রতিযোগিতায় বাচ্চাকে অংশগ্রহন করা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
কুমিল্লার সংস্কৃতিজন অধ্যাপক রাহুল তারণ বলেন, এসব প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিচারক নির্বাচনে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল। সদ্য সমাপ্ত শিল্পকলা একাডেমির সংগীত প্রতিযোগিতার বিচারকার্যের এ অনিয়ম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরণের নেতিবাচক কথাচালাচালি কুমিল্লার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে নিয়ত বিরূপপ্রভাব পড়ছে বলে আমি মনে করি।তাছাড়া, প্রতিযোগীর প্রভাবশালী অভিভাবকরা প্রতিযোগিতাস্থলে উপস্থিতি থাকলে নিরীহ প্রতিযোগীদের মধ্যে কিছুটা সংকোচ তৈরী হওয়া স্বাভাবিক।
কুমিল্লার আরেক সাংস্কৃতিক সংগঠক আকবর আবাদ বলেন, তালের ফাঁক- সম বোঝে না, সঠিকভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে পারেনা,এবারের এ সংগীতপ্রতিযোগিতায় এমন বিচারককে বিচারকার্য চালাতে দেখা গেছে। কুমিল্লার সংস্কৃতি এখন প্রকৃত সাংস্কৃতিকজনদের কাছে নেই বলেই আজকে এ দশা আমাদের।
শিল্পকলা একাডেমী সূত্রে জানাযায়, এটি ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে জেলা পর্যায়ে সংগীতসহ বিভিন্ন ইভেন্টের উপর স্কুল- কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিও বয়স ভেদে প্রতিযোগিতানুষ্ঠান।
গত ১২ জুন দিনব্যাপী ‘শিল্পকলা প্রতিযোগিতা ‘২৪’শিরোনামে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি ভবন এবং কবি নজরুল ইন্সটিটিউট ভবনে প্রতিযোগিতানুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছে।
সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাংকন সহ সর্বমোট ১০ টি বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ৩ টি স্তরে প্রত্যেক প্রতিযোগী সর্বোচ্চ ৩ টি বিষয়ে অংশ গ্রহন করতে পারবে শর্তে ১ম থেকে ৫ম শ্রেনি অথবা ১১ বছর, ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি অথবা ১৭ বছর, ১১শ থেকে স্নাতকোত্তর অথবা ২৫ বছর বয়সী প্রতিযোগীরা অংশ গ্রহন করতে পারবে। এতে অংশ গ্রহনের জন্য প্রত্যেক প্রতিযোগীকে শিল্পকলা একাডেমি ফেইজ বুক ফেইজ থেকে তথ্য ও ফরম সংগ্রহ- পূরণ পূর্বক নিবন্ধিত হতে হয়েছে। পরবর্তীতে ৬৪ জেলার ১ম স্থান লাভে কৃতিত্ব অর্জনকারী প্রতিযোগীরা ঢাকায় তথা জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করার সুযোগ পাবে।
এ সব প্রতিযোগিতায় বিচার কার্য সম্পন্ন করতে বিচারক নির্বাচন ও নিয়োগ প্রকৃয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি কতৃপক্ষ।